শরীরকে পেশিবহুল ও সুগঠিত করে তোলার নেশায় কী না করছেন আজকের তরুণ প্রজন্ম! জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর পাশাপাশি চলছে নিত্যনতুন ডায়েট ও সাপ্লিমেন্টের খোঁজ। সম্প্রতি এই তালিকায় যোগ হয়েছে এক অদ্ভুত এবং একই সঙ্গে উদ্বেগজনক এক নতুন প্রবণতা- স্তনদুগ্ধ পান।
2
11
অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি, বেশ কিছু বডিবিল্ডার এবং ফিটনেস উৎসাহী মানুষের মধ্যে পেশি বৃদ্ধির 'গোপন অস্ত্র' হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাতৃদুগ্ধ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়েছে।
3
11
অনেকেই দাবি করছেন, প্রোটিন পাউডারের সঙ্গে স্তনদুগ্ধ মিশিয়ে খেলে নাকি পেশির বৃদ্ধি সাধারণের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এই দাবির পিছনে আদৌ কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি? নাকি এটি একটি বিপজ্জনক অন্ধবিশ্বাস?
4
11
এই ধারণার পিছনে মূল যুক্তি হল, স্তনদুগ্ধ একটি শিশুর দ্রুত শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্রোথ হরমোন, অ্যান্টিবডি এবং সহজে হজমযোগ্য প্রোটিন ও ফ্যাট। বডিবিল্ডারদের একাংশের বিশ্বাস, যে উপাদান একটি শিশুকে কয়েক মাসে দ্বিগুণ ওজন অর্জনে সহায়তা করে, তা প্রাপ্তবয়স্কদের পেশি গঠনেও জাদুর মতো কাজ করবে।
5
11
বিশেষত, প্রসবের পর প্রথম কয়েক দিনের গাঢ়, হলুদ দুধ বা ‘কলোস্ট্রাম’-কে তাঁরা ‘তরল সোনা’ বলে মনে করছেন। তাঁদের মতে, এতে থাকা ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর পেশির বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর জন্য অনলাইন বাজার থেকে চড়া দামে স্তনদুগ্ধ কিনতেও পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা।
6
11
বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা এই প্রবণতাকে কেবল ভিত্তিহীনই নয়, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও মনে করছেন।
7
11
দিল্লির একজন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ জানিয়েছেন, মাতৃদুগ্ধ নিঃসন্দেহে নবজাতকের জন্য অমৃত। এর পুষ্টিগুণ একটি শিশুর অপরিণত পাচনতন্ত্রের জন্য নিখুঁতভাবে তৈরি। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পুষ্টির চাহিদা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
8
11
প্রোটিনের পরিমাণ: বডিবিল্ডারদের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ১০০ মিলিগ্রাম স্তনদুগ্ধে প্রোটিনের পরিমাণ মাত্র ১ থেকে ১.৫ গ্রাম, যেখানে সমপরিমাণ গরুর দুধে প্রোটিন থাকে প্রায় ৩.৫ গ্রাম। সুতরাং, প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে একজন প্রাপ্তবয়স্ককে বিপুল পরিমাণ স্তনদুগ্ধ পান করতে হবে, যা অবাস্তব এবং অর্থনৈতিকভাবেও অসম্ভব।
9
11
হরমোন ও গ্রোথ ফ্যাক্টর: স্তনদুগ্ধে যে গ্রোথ হরমোন ও অন্যান্য উপাদান থাকে, তা প্রাপ্তবয়স্কদের পেটের অ্যাসিডের সংস্পর্শে এলে কার্যকারিতা হারায়। শিশুর পাচনতন্ত্র এই উপাদানগুলিকে শোষণ করতে পারলেও, প্রাপ্তবয়স্কদের হজম প্রক্রিয়া ভিন্ন হওয়ায় এর কোনও বিশেষ প্রভাব পেশির উপর পড়ে না।
10
11
স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি: সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল এর সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। স্তনদুগ্ধ এক ধরনের শারীরিক তরল। এর মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি, সি এবং এইচআইভি-র মতো মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে। অনলাইনে যে দুধ বিক্রি হয়, তা যাঁর শরীর থেকে আসছে, তাঁর কোনও রোগ আছে কিনা, অথবা তিনি কোনও ওষুধ গ্রহণ করেন কিনা, তা জানার কোনও উপায় নেই।
11
11
এছাড়াও, এই দুধ সংরক্ষণ এবং পরিবহণের ক্ষেত্রে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে ব্যাকটেরিয়াঘটিত সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা থাকে। সুতরাং, বিশেষজ্ঞরা এক কথায় এই প্রবণতাকে খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, পেশি গঠন করার জন্য স্তনদুগ্ধ পান করার ধারণাটি একটি ভ্রান্ত ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং এর থেকে মারাত্মক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।