পথকুকুর নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের আবহ এবার সম্ভবত থামল। দিল্লির পথকুকুরদের নিয়ে রায় বদলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে দুই বিচারপতির বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা স্থগিত রাখা হল। পরিবর্তে পথকুকুরদের বন্ধ্যাত্বকরণে জোর দিল আদালত। প্রাপ্ত তথ্য, ১১ আগস্টের নির্দেশাবলীতে বদল করেছে শীর্ষ আদালত। আগের রায়ে বলা হয়েছিল, দিল্লি এনসিআর এলাকায়, পথ কুকুর আর রাস্তায় থাকতে পারবে না। তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে অন্যত্র। তারপর থেকে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ, পশুপ্রেমীরা। শুক্রবার শীর্ষ আদালত ওই রায়ের পরিবর্তন করেছে। 

এদিন জোর দেওয়া হয়েছে পথকুকুরদের জীবাণুমুক্ত করার এবং টিকা দেওয়ার বিষয়ে। শুক্রবার আদালত জানায়, পথ কুকুরদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবাণুকরণ প্রতিষেধক এবং বন্ধ্যাত্বকরণ টিকা দেওয়ার পর, আবার যে জায়গার কুকুর, সেই এলাকাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ব্যতিক্রম হিসেবে, হামলা চালাতে পারে, অর্থাৎ হিংস্র কিংবা জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে - এমন কুকুরদের ছাড়া যাবে না বলেও জানানো হয়েছে।  পশুপ্রেমী এবং পশুকল্যাণ সংগঠন, বিভিন্ন এনজিও এই রায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বেঞ্চ বদল করে দেন। শুক্রবার সেই নতুন বেঞ্চ রায় শোনাল।


সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন পশুপ্রেমীরা। জানিয়েছেন টালিপাড়ার একাধিক পশুপ্রেমীরা। আদালতের রায়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। আজকাল ডট ইন-কে পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায় বললেন, “ এইমুহূর্তে যে আর্থ-সামাজিক পরিবেশে আমরা বাস করছি,সেখানে সহানুভূতি একমাত্র মাধ্যম যার দ্বারা মানবিকতা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।  এই রায় বদল দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উপর মানুষের বিশ্বাস,আস্থা বাঁচিয়ে রাখল। কারণ যদি শীর্ষ আদালতের ওই রায়টি বলবৎ হত, তাহলে এটা স্পষ্ট হয়ে যেত যে বিচার সবসময় দুর্বলের বিরুদ্ধেই যাবে। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, আমরা সবসময় দুর্বল, অসহায়ের পক্ষে...তাই  পথকুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম নির্দেশটি যদি লাগু হত তাহলে এটা প্রমাণ হয়ে যেত যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধান বিরোধী কাজ করছে। কিন্তু স্বস্তি  যে সেই ভয়ের সময় আসল না। আর এই আবহে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য পদ্ম শিবিরের আইটি সেলের তরফে ভরপুর নকল ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে!  তাই ভয় যে একেবারে যায়নি, তা নয়। আসলে, চারপাশে সুনিপুণভাবে ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই হিংসার রাজনীতি থেকে যদি আমরা বেরিয়ে আসতে না পারি, এই যে না পোষালেই মেরে ফেলব-সরিয়ে দেব হয়ে যায়, তাহলে তা সত্যিই ভয়ের। তবে হ্যাঁ, শীর্ষ আদালতের এই নয়া রায়ের সাময়িক স্বস্তি বোধ করছি তো বটেই। পাশাপাশি এটাও জানিয়ে রাখব, যতদিন না আমাদের দেশে এদের জন্য, এদের বাঁচানোর জন্য, নিরাপত্তার জন্য  শক্তিশালী আইন লাগু না হচ্ছে ততদিন নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও জায়গাই নেই!”

 


শ্রীলেখা মিত্র নিজের অনুনকরণীয় ছন্দে বললেন, “আমি জানতাম, এরকম কিছু একটা হবে। জানতাম! কারণ এরকম কিছু হতে পারে না। কারণ সুপ্রিম কোর্টের কোনও তিনজন অমানবিক, বিচ্ছিন্ন বিচারকের ইচ্ছেতে এরকম কিছু হতে পারে না! এ তো পথকুকুরদের প্রায় মেরে ফেলারই মত কাজ হতে চলেছিল। আর কুকুরদের এক একেকটা আশ্রয়কেন্দ্রে কী কী অপরাধ চলেছে, সেসব তো আমরা দেখেছি! একটা কথা পরিষ্কার বলি, একটা পশু যদি ক্ষুধার্থ না থাকে, তার শরীরে যদি ক্ষত না থাকে -তাহলে কেন সে আক্রমণ করবে মানুষকে?  এর উদাহরণ হিসেবে আর একটা মজার কথা বলি। বোম্বের একজন বিচারক জানিয়েছেন, তাঁদের কোর্ট চত্বরে পথকুকুরদের সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল। তারপর তাঁরা সবাই মিলে ওই কুকুরদের খেতে দেওয়া শুরু করেন  নিয়মিত। এরপর থেকে ওই কুকুরগুলো সময়মতো খেতে চলে আসে, পেট পুরে খায় এবং তারপর প্রায় সারাদিন চুপটি করে ঘুমোয়! তাহলে?"  সামান্য থেমে অভিনেত্রী খানিক ক্ষুব্ধ স্বরে বলেন, " নতুন রায়ে আদালত জানিয়েছে, কোনও শর্তেই রাস্তায় প্রকাশ্যে কুকুরদের খাওয়ানো যাবে না। পরিবর্তে প্রশাসনকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় পুরসভা ধরে ধরে কুকুরদের খাওয়ানোর স্থান নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এর পরেও যাঁরা রাস্তায় খাবার দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হতে পারে। মানে কী বলব! প্রতিটা কুকুরের নিজস্ব এলাকা থাকে, সেখানেই তাঁরা ঘোরাফেরা করে, খায়। একটি কুকুর অন্য কুকুরের এলাকায় গেলে, দেখামাত্রই অন্যরা তাকে জখম করে কিংবা প্রায় মেরে ফেলে। কারণ তারা মনে করে ওই কুকুরটা তাদের খাবার এবং কুকুরীর উপর দখল নিতে এসেছে! তাই নতুন নির্দেশ দেওয়ার আগে এগুলো খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল না? মানে, দিয়ে দিলেই হল! আমার প্রশ্ন, পাঁচজন আলাদা বাড়ির মানুষ হঠাৎ করে কোনও নির্দেশ পেয়ে একসঙ্গে এসে খেতে শুরু করে দিতে পারবে? একসঙ্গে থাকা শুরু করবে? মানে সম্ভব? তাই এই রায় অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক এবং অনৈতিক!”

 

মুখ খুলেছেন অভিনেতা ঋষভ বসু-ও। আজকাল ডট ইন-কে অল্প কথায় অথচ দৃঢ়ভাবে তিনি বললেন, “চিন্তার রেশ থেকে গেলেও এই রায় সাময়িক স্বস্তি পশুপ্রেমীদের কাছে। এখনও যে বিচারব্যবস্থার উপর মানুষের আশা হারানো উচিত নয়, সেটা একটা প্রমাণ। তবে হ্যাঁ, এই রায় তৃণমূল স্তরে কীভাবে পালন করা হবে, সেটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।" মুচকি হেসে সরলক্ষ হোমস-এর কথাশেষে সংযোজন - আর একটা কথা, যাঁরা কুকুরপ্রেমীদের প্রায় দাঁত-নখ বের করে সমাজমাধ্যমে আক্রমণ করছিলেন, হেয় করছিলেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলব- মানসিকভাবে সুস্থ হোক, ওদের ভাবনার শুদ্ধিকরণের জন্য টিকা দেওয়া হোক। এককথায়, ওদের চৈতন্য হোক!”