নিজস্ব সংবাদদাতা: ছোটদের ছবি, অথচ শিশুসুলভ নয়। গভীর সামাজিক বার্তা দেওয়া হয়েছে সোজাসাপটা অথচ সুচারু ভঙ্গিতে। সহজ এবং সারল্যের সঙ্গে মিশে রয়েছে দৃঢ়তা। ছবির নাম ‘তোর্ষা একটি নদীর নাম’। পরিচালক কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহীর এই ছবি নিবেদন করছেন চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। সেই সঙ্গে ছবির পোস্টার সৃজনের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। শুক্রবার, বড়পর্দায় মুক্তি পেল এ ছবি। 

 

দক্ষিণ কলকাতার এক নামি প্রেক্ষাগৃহে আয়োজন করা হয়েছিল ছবির প্রিমিয়ার। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ছবির কলাকুশলীরা। আজকাল ডট ইন-কে ছবির পরিচালক কৃষ্ণেন্দু বললেন, আমি ভীষণ আশাবাদী এ ছবি নিয়ে। দুপুর থেকেই যা খবর পাচ্ছি, দর্শক দেখছেন এ ছবি। আমাদের এই ছবিতে তো তথাকথিত বড়সড় স্টারকাস্ট নেই, সেই নিরিখে রেসপন্স এখনও পর্যন্ত তো ভালই। " কথাশেষে তিনি জানান, ভবিষ্যতেও সুযোগ পেলে ছোটদের নিয়ে ছবি তৈরি করবেন।

 

 

ছবিতে অন্যতম মুখ্যচরিত্রে রয়েছেন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, " বেশি সংখ্যক দর্শক আমাদের কাজ দেখবেন, এই আশাতেই সব অভিনেতা-অভিনেত্রী যেকোনও প্রজেক্টে কাজ করেন। আমিও তার বাইরে নই। এ ছবি আড়াই বছরের পরিশ্রমের সফল। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি, প্রযোজকের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। স্বল্প পরিসরের বাজেটের হলেও সবাই আন্তরিকভাবে, প্যাশনেটভাবে এই ছবিতে কাজ করেছেন। শেষপর্যন্ত যে ওটিটির রাস্তায় না হেঁটে, বড়পর্দায় এ ছবি মুক্তি পাচ্ছে-নির্মাতাদের সেই সাহস, চেষ্টা সত্যিই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এবারে ছবির যে বিষয়টা বাছা হয়েছে, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সমস্যা ও সমাধানের কথা বাচ্চাদের মাধ্যমে যেভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হয়েছে, সেই আইডিয়াটাও দারুণ। বাচ্চাদের অবশ্যই দেখা উচিত এ ধরনের ছবি।আমার নিজের দুই সন্তানকেও তো সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি, এ ছবি দেখানোর জন্য।"

 

'তোর্ষা একটি নদীর নাম ' ছবিতে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপান্বিতা ঘোষ। তিনি এ ছবির অন্যতম প্রযোজকও বটে। স্বল্প কথায় তিনি বললেন, " বাংলায় তো খুব বেশি ছোটদের ছবি হয় না। তার উপর গভীর সামাজিক বার্তাও রয়েছে এ ছবিতে, তবে তা এতটুকুও গুরুগম্ভীরভাবে নয়। বেশ ইন্টারেস্টিং, তাই কৃষ্ণেন্দু এ ছবির গল্প শোনাতেই রাজি হয়ে যাই। তবে এ ছবি কিন্তু শুধুই ছোটদের নয়। বরং বলব, ছোটদের চোখ দিয়ে বড়দের কিছু শেখাতে চেয়েছি, বোঝাতে চেয়েছি। " 

 

প্রসঙ্গত, সমাজ আরোপিত তথাকথিত জাত-পাত, বর্ণ এর নানান নিয়ম, বাধা কিছুই বোঝে না শিশুরা, মানেও না। এবং তাই হয়তো সত্যি কথাটা সত্যিভাবে বলতে পারে তাঁরা। সত্যিকারের কাজটাও সারল্যমাখা সহজে করে ফেলতে পারে। কোনও চোখরাঙানি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই। সুদীপ মুখোপাধ্যায়, লামা ছাড়া ছবিতে জনপ্রিয় কোনও অভিনেতা নেই। ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকায় রয়েছেন ত্রিপর্ণা ভৌমিক। আছেন কাব্য ভৌমিক, রুদ্রজ্যোতি ঘোষ, গীতশ্রী চক্রবর্তীর মতো আনকোরা শিশুশিল্পীরা। এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র । মোট তিনটি গান রয়েছে এ ছবিতে । গান তিনটি গেয়েছেন রূপম ইসলাম, ইমন চক্রবর্তী এবং অন্বেষা দত্তগুপ্ত । গানগুলির মধ্যে রয়েছে এক অনাবিল আনন্দ । দেবজ্যোতি মিশ্রের আশা, এটিই এ বছরের ‘মানিকবাবুর মেঘ’! 

 

 

আসলে, এ ছবিতে সমাজের জাত-পাত, বর্ণভিত্তিক বিভাজন ও বাধানিষেধের প্রশ্ন তুলেছে একদল শিশু। তারা জানে না সমাজের নিয়ম, মানেও না। সেই অজ্ঞতা থেকেই উঠে আসে নির্মল সত্য। শিশুর চোখে যেমন থাকে না সংকীর্ণতা, তেমনই থাকে না ভয়। তাই তারাই সমাজের কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে—এই বার্তাই স্পষ্ট হয়েছে ছবিতে।