শোকে স্তব্ধ দক্ষিণী সিনেমা জগত। ‘কেজিএফ’ ছবিখ্যাত কন্নড় অভিনেতা হরিশ রাই আর নেই। বৃহস্পতিবার, দীর্ঘ এক বছর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ৫৫ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।বেঙ্গালুরুর কিডওয়াই মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট অফ অনকোলজি-তে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যানসার ইতিমধ্যেই তাঁর পাকস্থলী ও অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছিল। কেমোথেরাপি ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার সত্ত্বেও অভিনেতার শরীর চিকিৎসায় আর সাড়া দেয়নি।

 

জীবনের শেষ বছরে হরিশ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন তাঁর অর্থনৈতিক সংগ্রামের গল্প। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এক একবারের চিকিৎসা খরচই প্রায় ১০.৫ লক্ষ টাকা, কারণ একটি ইনজেকশনের দামই ৩.৫৫ লক্ষ টাকা, যা প্রতি সাইকেলে তিনবার দিতে হয়। তিনি আরও বলেছিলেন, এমন চিকিৎসায় সাধারণত ২০টি ইনজেকশন লাগে, যার মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা!

 

এই অবস্থায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সহ-অভিনেতা ‘কেজিএফ’ খ্যাত যশ কি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন? উত্তরে হরিশ শান্তভাবে বলেছিলেন, “যশ আগেও আমাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু আমি তো ওকে বারবার বলতে পারি না। একজন মানুষ কতটা করবে? আমি জানি, ও জানলে আবারও পাশে দাঁড়াবে। ও সবসময় শুধু একটা ফোন কলের দূরত্বেই থাকে...অবশ্য এখন ওর ‘টক্সিক’ ছবির শুটিং চলছে।”

 

কন্নড়, তামিল ও তেলুগু - তিন ভাষাতেই কাজ করেছেন হরিশ রাই। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘ওম’, ‘সামারা’, ‘ব্যাঙ্গালোর আন্ডারওয়ার্ল্ড’, ‘জোদিহাক্কি’, ‘রাজ বাহাদুর’, ‘সঞ্জু ওয়েডস গীতা’, ‘স্বয়ম্বর’, ‘নাল্লা’ এবং অবশ্যই ‘কেজিএফ’ ফ্র্যাঞ্চাইজির দু'টি ছবি। নিজের অভিনয়জীবনে হরিশ বরাবরই ছিলেন শান্ত, সংযত এবং বাস্তবের কাছাকাছি চরিত্রের মুখ। আজ তাঁর চলে যাওয়ায় দক্ষিণী সিনেমা হারাল এক নিঃশব্দ শক্তি, যার নাম অনেকেই হয়তো জানতেন না, কিন্তু যার উপস্থিতি পর্দায় ছিল অবিস্মরণীয়।


অবশ্য ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘কেজিএফ চাচা’। এই সিরিজের ‘চাচা’ চরিত্রই তাঁকে সারা দেশের দর্শকদের মনে জায়গা করে দেয়। সেই চরিত্রের স্নেহ, সহজাত হাসি আর অন্তরঙ্গ সংলাপ আজও ভক্তদের মনে অমলিন। শুধু ‘কেজিএফ’ নয়, ১৯৯৫ সালের ক্লাসিক ওম ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমেই নজর কেড়েছিলেন তিনি। উপেন্দ্র পরিচালিত সেই ছবিতে শিবরাজকুমারের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছিলেন হরিশ, এবং সেই ছবিই তাঁর খ্যাতির দরজা খুলে দিয়েছিল। তাঁর শেষ কাজ ছিল সিমহারূপিণী ছবি, যেখানে কিনাল রাজের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন তিনি। অভিনয়ের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা এবং সরলতা সহকর্মীদেরও গভীরভাবে ছুঁয়ে গিয়েছিল।

অভিনেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকস্তব্ধ কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ভক্তরা এবং সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন। কেউ তাঁর সংলাপ শেয়ার করছেন, কেউ আবার কেজিএফ থেকে পুরনো দৃশ্য তুলে দিয়ে লিখছেন, “চাচা, আপনি আমাদের হৃদয়ে চিরজীবী।”

‘কেজিএফ’ তারকা যশের স্ত্রী ও অভিনেত্রী রাধিকা পণ্ডিতও শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রতিভাবান অভিনেতা হরিশ রায়ের প্রয়াণের খবর শুনে গভীরভাবে মর্মাহত। কন্নড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবদান সবসময় মনে থাকবে। ঈশ্বর তাঁর আত্মাকে শান্তি দিন এবং পরিবারকে শক্তি দিন।”