ভারতীয় সিনেমার বয়স এক শতকেরও বেশি। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েই সিনেমা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আমাদের সংস্কৃতির আবেগঘন অংশ। সেই সময় বেশিরভাগ অভিনেতা, পরিচালক, সংগীতকাররাই নতুন পথ খুঁজছিলেন। বলিউডে তখন ‘পিছু ধরা পরিচিতির’ চেয়ে ছিল ‘নিজেকে গড়ার’ লড়াই। এমন এক সময়েই মুম্বই শহরে নতুন করে জীবন শুরু করেন জি.পি. সিপ্পি—যিনি পরে হয়ে ওঠেন ‘শোলে’র কিংবদন্তি প্রযোজক।

 এক রাতে সব শেষ… তারপর সেখান থেকেই শুরু এক অকল্পনীয় স্বপ্নের।  জি.পি. সিপ্পির জন্ম হয়েছিল করাচির এক অভিজাত ব্যবসায়ী পরিবারে। কিন্তু দেশভাগ এসে সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। তাঁদের প্রাসাদোপম বাড়ি, বড় ব্যবসা—সব ফেলে একরাতে পালাতে হয়েছিল মুম্বইয়ে। বাকি হাজারো উদ্বাস্তু পরিবারের মতোই, সিপ্পি পরিবারকেও শুরু করতে হয় শূন্য থেকে।

একসময় রাজকীয় জীবনযাপন করা সিপ্পি হঠাৎই নির্বাসিত জীবনে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ীয়, তিনি প্রথমে কার্পেট বিক্রি করেন, রেস্তোরাঁ খোলেন, কিন্তু কিছুই জমছিল না। একদিন কোলোবার এক আধা-নির্মিত বাড়ি দেখতে পেয়ে, সেটি কিনে বেশি দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এখান থেকেই শুরু রিয়েল এস্টেট বিজনেস—আর এখান থেকেই শুরু তাঁর ভাগ্যবদলের পথ!

 ‘বিল্ডার’ থেকে ‘প্রোডিউসার’—সিনেমার পেছনে বিনিয়োগ, তারপর স্ট্রাগল।  আসলে পয়সা আসতে শুরু করায় তিনি মুম্বইয়ের অভিজাত মহলে মিশতে শুরু করেন। সেখানেই কেউ তাঁকে বলেন, “সিনেমার ব্যবসায় লগ্নি করুন।” সেই কথাতেই তিনি শুরু করেন প্রযোজনা—প্রথম ছবি সাজা (১৯৫৩)। এরপর বেশ কিছু ছবি করেন, কিন্তু পান দ্বিতীয় সারির প্রযোজকের তকমা। নিজেই কিছুদিন অভিনয় ও পরিচালনাতেও হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি।

তখন তিনি নিজের ছেলে রমেশ সিপ্পিকে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ফিরিয়ে এনে কোম্পানির দায়িত্ব দেন। রমেশ ফিরেই তৈরি করেন আন্দাজ, সীতা অউর গীতা—তবে সাফল্যের আসল ঝলক আসে ১৯৭৫ সালে, ‘শোলে’ দিয়ে।

 ৩ কোটি টাকার বাজেট, ৫ বছর হাউজফুল—‘শোলে’ বদলে দিল বলিউডকেই! আসলে শোলে ছবির বাজেট ছিল ৩ কোটি টাকা—সেই সময়ের জন্য অভাবনীয়। এই ছবির চরিত্র, সংলাপ, দৃশ্য, ভিলেন গব্বর—সব কিছুই মিথ হয়ে ওঠে।লেখা হয়েছিল সালিম-জাভেদের কলমে, আর অভিনয়ে ছিলেন অমিতাভ, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, হেমা মালিনী, আমজাদ খান, জয়া বচ্চন প্রমুখ।

ছবিটি একটানা ৫ বছর সিনেমা হলে চলে, যা তখন অবিশ্বাস্য ছিল। পরে এই ছবির জায়গায় মুক্তি পায় সিপ্পির পরবর্তী ছবি 'শান'।

 ‘সাগর’ থেকে ‘রাজু বান গেয়া জেন্টলম্যান’—সোনার ছোঁয়া সব প্রজেক্টে। ‘শোলে’র সাফল্যের পর সিপ্পি ছিলেন চূড়ায়। তিনি প্রযোজনা করেন ডিম্পল কাপাডিয়ার কামব্যাক ছবি সাগর, পাথর কে ফুল, রাহু বান গেয়া জেন্টলম্যান সহ একাধিক সফল ছবি।

২০০৭ সালে ৯৩ বছর বয়সে প্রয়াত হন এই কিংবদন্তি প্রযোজক। রেখে যান একটা সিনেমা সাম্রাজ্য, একটা মিথ, আর হাজারো স্বপ্নপূরণের অনুপ্রেরণা।