নিজস্ব সংবাদদাতা: স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করেও সেন্সর বোর্ডের দরাজ ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে অক্ষয় কুমার-মাধবন অভিনীত ছবি ‘কেশরী চ্যাপ্টার-২’! বড়পর্দা থেকে এই ছবি গুটিগুটি পায়ে এসে ঢুকেছে ওটিটির দুনিয়ায়। এবং তারপর থেকেই নেটপাড়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহলে শুধু হয়েছে কোলাহল। বিধাননগর থানায় ৭ প্রযোজকের বিরুদ্ধে বিএনএস-এর একাধিক ধারায় এফআইআর করা হয়েছে, জানিয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি হেড কোয়ার্টার অনীশ সরকার।

 


তৃণমূলের অভিযোগ বাংলাকে হেয় করার চক্রান্ত এই প্রথম নয়, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বারবার নানাভাবে বাংলা ও বাঙালির অস্মিতা নিয়ে টানাপোড়েন চালিয়েছে। এবার তা সীমাহীন। অক্ষয় কুমার, আর মহাদেবন, ভিকি কৌশল, অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত ছবিতে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম বিকৃত করা হয়েছে। শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর পদবি পাল্টে করা হয়েছে ‘ক্ষুদিরাম সিং’। বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নাম-পদবি বদলে গিয়ে হয়েছে ‘বারীন কুমার’। ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য তাঁদের বোমা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন যে হেমচন্দ্র কানুনগো, তাঁর জায়গায় কৃপাল সিং নামে একটি চরিত্র নিয়ে আসা হয়েছে। ছবিটি তৈরি হয়েছে ‘দ্য কেস দ্যাট শুক দ্য এম্পারার বাই রঘু পালাত অ্যান্ড পুষ্পা পালাত’ বইটির গল্পকে ভিত্তি করে। লিখেছেন করণ সিং ত্যাগী, অমৃত পাল সিং বিন্দ্রা। করণ সিং নিজেই ছবির পরিচালক। এই ছবির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর হয়েছে। ৭ প্রযোজকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

 

 

এবার এই বিষয়ে মুখ খুললেন জনপ্রিয় চিকিৎসক-অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ। বাংলার তিন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনয়-বাদল-দীনেশকে পরিচালক অরুণ রায় তৈরি করেছিলেন ‘৮/১২’ .সেই ছবিতে বিনয় কৃষ্ণ বসুর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল কিঞ্জল নন্দকে।  ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর এই ৩ সংগ্রামী ইউরোপিয়ান পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে অভিযান চালিয়ে হত্যা করেছিলেন কুখ্যাত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সিম্পসনকে। এর পর মাতৃভূমির জন্য অনায়াসে নিজেদের প্রাণ দিয়েছিলেন বিনয়-বাদল-দীনেশ।

কিঞ্জলের কথায়, ইতিহাসনির্ভর ছবিতে তথ্য যে পাকাপোক্ত থাকবে সেটাই তো প্রথম শর্ত। বলিউডের মতো এত পেশাদারিত্বের একটি জায়গা তার উপর অক্ষয়ের মতো প্রথম সারির  নায়কের ছবিতে এই ঘটনা ঘটে কীভাবে? খুবই হতাশাজনক! আমি তো বলব, দেশের কাছে খুব অপমানজনক! ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে খুব খারাপ বার্তা গেল। আরও একটা কথা বলি, বরাবরই আমি লক্ষ্য দেখেছি বাংলার ঐতিহ্যকে, বাংলার অবদানকে, দেশ স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলার বিপ্লবীদের ছোট করার একটা প্রবণতা রয়েছে কেন্দ্রের! এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। আর এই ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই হাস্যস্পদ নয়, যা হয়েছে তা অপরাধ!

 

 

 

অতীতে পরিচালক-নির্দেশক গৌতম হালদারের ‘রক্তকরবী’তে নন্দিনীর চরিত্রে অভিনয় করতেন চৈতি। বর্তমানে এই নাটকের সম্পাদনা এবং নির্দেশনার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন তিনি। ‘রক্তকরবী’র ক্ষেত্রে গৌতমকে তিনি অনুসরণ করছেন না। নির্দেশক হিসেবে অনেক কিছুই বদলেছেন তিনি, যা বর্তমান সময়ের নিরিখে যা আরও আবেদনময়। ‘রক্তকরবী’ নাটকে একাধারে শাসকের অত্যাচারের প্রতিবাদ এবং তার সঙ্গেই ভালবাসার এক জটিল চিত্রাঙ্কন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

আজকাল ডট ইন-কে চৈতি ঘোষাল বললেন, ছবির পরিচালক কে? কোনওদিন নাম শুনিনি! কী কাজ করেছেন এমন যে ওঁকে এত পাত্তা দেওয়া হচ্ছে, ওঁকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে? আর অক্ষয় কুমার? একজন ফ্লপ অভিনেতা! শেষ কবে হিট ছবির মুখ দেখেছেন?  কিছু ভাল কমেডি ছবি ছাড়া নিজের গোটা কেরিয়ারে ক'টা বলার মতো ছবিতে কাজ করেছেন?  উনি তো আজকাল এক বিশেষ দলের মুখপাত্র। অক্ষয় যে অভিনয় করেন সেটা মানুষ এমনি একদিন ভুলে যাবে! আজ পর্যন্ত কোনও ভাল ছবির  সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। অক্ষয় যা করছেন, তা এককথায় অপসংস্কৃতি! 

 

এবার আসি মাধবনের কথায়। পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)-এর প্রধান এবং এর সরকারি পর্ষদের চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন তিনি। মাধবন-কেই বরং জিজ্ঞেস করা উচিত আপনি সত্যিই কি এই আসনে বসার যোগ্য? একটা কথা বলি, আমার ছেলে এফটিআইআই থেকে পাশ করেছে। এফটিআইআই-এর মাহাত্ম্য, নাম সব-ই কিন্তু প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেখানকার ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের সৌজন্যে, সেখানকার কোনও প্রধানের জন্য নয়!  স্পষ্ট করে বলতে চাই, যতদিন ইতিহাস ঘাঁটার মানুষ থাকবে, শিক্ষিত মানুষেরা থাকবেন ততদিন ক্ষুদিরাম বসু-কে অক্ষয়, আর ওই পরিচালক....কী নাম যেন? যাই হোক, কেউ মুছে দিতে পারবেন না ইতিহাস থেকে! শুধু ক্ষুদিরাম কেন কোনও বাংলার বিপ্লবীর নাম মুছে দেওয়া যাবে না! আর ওঁরা কী করল তাতে বাংলা কোনওভাবেই ছোট হয় না! এতটাও বিরাট কেউ হননি আজও!