১৯৬২। রেজ্যাং লা উপত্যকা। লাদাখের বরফে ঢাকা দুর্গম সীমান্তে ইতিহাস রচনা করেছিল মাত্র ১২০ জন ভারতীয় সৈনিক। তাদের সামনে ছিল হাজার হাজার চিনা সেনার বহর। পিছু হটেননি তাঁরা। গুলি শেষ হলেও রাইফেল ফেলে দেননি। সেই বাস্তব যুদ্ধগাথার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হচ্ছে পরিচালক রাজনীশ 'রাজি' ঘোষ পরিচালিত ছবি ‘১২০ বাহাদুর’, যেখানে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন ফারহান আখতার। সম্প্রতি, প্রকাশ্যে এল এই ছবির প্রথম ঝলক, যা ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে জাগিয়ে তুলেছে দেশপ্রেম, আবেগ আর বিস্ময়ের ঢেউ।
দেশের বীরের চরিত্রে ফারহান আখতার। ছবিতে ফারহানকে দেখা যাবে পরম বীর চক্র সম্মানপ্রাপ্ত মেজর শয়তান সিং ভাটি-র চরিত্রে। তাঁর নেতৃত্বেই ১৩ কুমায়ুন ব্যাটালিয়নের ১২০ জন জওয়ান অসম লড়াই চালিয়েছিলেন চীনের বিপক্ষে। টিজারে ফারহানের উপস্থিতি যথেষ্ট সংযত, অথচ অভ্যন্তরীণ আগুনে জ্বলে ওঠা এক ‘বীর’। সংলাপ—“পিছু হটবে না!” আর “উর্দি শুধু সাহস নয়, বলিদানও চায়”—এতটাই সংবেদনশীল যে মুহূর্তে গায়ে কাঁটা দেয়।
‘১২০ বাহাদুর’ টিজারেই দৃশ্যমান যুদ্ধের কাব্য। টিজার শুরুই হয় তুষারে ঢাকা দুর্গম অঞ্চলের প্যানোরামিক শট দিয়ে। বরফ, বন্দুক, সংলাপ আর সৈনিকদের চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে যুদ্ধের মানবিক রূপ। কোনও রঙচঙে মহিমাকীর্তন নয়, বরং কঠোর বাস্তবের ছায়ায় তৈরি এই উপস্থাপনা।
টিজার মুক্তির পরই সমাজমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ # ১২০ বাহাদুর (120Bahadur) ট্রেন্ড করতে শুরু করে। একদিকে দর্শকরা বলছেন, “গায়ে কাঁটা দিচ্ছে”, অন্যদিকে ফারহানের অনুরাগীরা লিখেছেন, “শয়তান সিং হিসেবে দুরন্ত পারফর্মেন্স দিতে চলেছেন ফারহান!”। অনেকে ছবির সিনেমাটোগ্রাফি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর-এরও প্রশংসা করেছেন—বলার অপেক্ষা রাখে না, এটি বড় পর্দায় দেখার জন্যই তৈরি।
ছবিটির শুটিং হয়েছে লাদাখ, রাজস্থান ও মুম্বইয়ের রিয়াল লোকেশনে। পরিচালক রাজ়ি ঘোষের মতে, “এই গল্প শুধু চিত্রনাট্য নয়, এটা ইতিহাস। তাই কোথাও কোনও কারিকুরি নয়, পুরো গল্পটাই চেয়েছি বাস্তবের কাছাকাছি রাখতে।” ছবিটি প্রযোজনা করছেন ফারহান আখতার ও রিতেশ সিধওয়ানি (এক্সেল এন্টারটেইনমেন্ট) এবং অমিত চন্দ্রা (ট্রিগার হ্যাপি স্টুডিওজ)। এই প্রযোজনাগুলি অতীতে ‘লক্ষ্য’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘ডন’, ‘তুফান’–এর মতো নানা ঘরানার ছবি করেছে। এবার তারা পুরোপুরি নেমে পড়েছে একটি যুদ্ধের গাথা নিয়ে।
নির্মাতাদের দাবি,আদতে একজন যোদ্ধার কাহিনি, দেশের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই ছবি শুধু যুদ্ধ দেখাবে না, দেখাবে যুদ্ধের পেছনের মানুষগুলোকে—তাঁদের ভয়, সাহস, বলিদান এবং নীরব বেদনা। মেজর শৈতান সিং-এর আত্মত্যাগ আজও ভারতীয় সেনার গর্বের অংশ। তাঁর সম্মানে বানানো এই ছবিটি আসলে এক সম্মানজ্ঞাপন, এক শ্রদ্ধার্ঘ্য।
ছবিটি মুক্তি পাবে চলতি বছরের ২১ নভেম্বর। সময়ের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ—কার্গিল বিজয় দিবসের পরবর্তী সময়ে এই ছবি রিলিজ হতে চলেছে, যেন এক প্রতীকী যোগসূত্র তৈরি করছে অতীত ও বর্তমানের সাহসিকতার মাঝে।
তাহলে ‘১২০ বাহাদুর’ কি শুধুই ছবি? নাকি এক জাতীয় চেতনার পুনর্জাগরণ? ফারহানের ‘তুফান’-এর পর বড়পর্দায় এটাই তাঁর প্রত্যাবর্তন। কিন্তু এইবার তিনি রিংয়ের বক্সার নন, যুদ্ধক্ষেত্রের ‘সাইলেন্ট ফাইটার’। ছবির টিজার যেন বলে দেয়—দেশের জন্য জীবন দান কোনও সিনেম্যাটিক ফ্যান্টাসি নয়, বরং বাস্তবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প।
