আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০১৮ সালের জুনে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় ঘোষিত জাতীয় জৈবইন্ধন নীতি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ২০২২ সালের সংশোধনীতে এই লক্ষ্য আরও জোরালোভাবে পুনর্ব্যক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২১ সালের জুনে নীতি আয়োগ তাদের “ইথানল মিশ্রণ রোডম্যাপ ২০২০–২৫” প্রকাশ করে, ড. রাকেশ সরওয়াল কমিটির নেতৃত্বে। তখন কেউ ভাবেনি যে ইথানল তৈরির একটি ক্ষুদ্র উপজাত পুরো কৃষি বাজারে এমন ঢেউ তুলবে, যা সয়াবিন চাষিদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ইথানলের উৎস: শর্করা থেকে খাদ্যশস্যে পরিবর্তন
নীতিআয়োগের অনুমান অনুযায়ী, মোট ১০.১৬ বিলিয়ন লিটার ইথানল চাহিদার ৫৪ শতাংশ আসবে আখ-ভিত্তিক কাঁচামাল থেকে এবং বাকিটা খাদ্যশস্য থেকে। কিন্তু ২০২৪–২৫ সালের ইথানল সরবরাহ বছরে এই অনুপাত সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। তেল বিপণন সংস্থাগুলোর সঙ্গে ১০.৭৭ বিলিয়ন লিটার ইথানল সরবরাহের চুক্তির মধ্যে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন লিটার (৩২%) আসবে আখ থেকে এবং ৭.৩ বিলিয়ন লিটার (৬৮%) আসবে খাদ্যশস্য থেকে। এর মধ্যে ভুট্টা থেকেই প্রায় ৫ বিলিয়ন লিটার (৪৬%) ইথানল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা প্রায় ১.৩১ কোটি টন ভুট্টা ব্যবহার করবে — মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
এছাড়া প্রায় ১.২ বিলিয়ন লিটার ইথানল উৎপাদিত হবে এফসিআই থেকে সরবরাহ করা চাল দিয়ে, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২২.৫০ টাকা। সরকার ইতিমধ্যেই ৫.২ মিলিয়ন টন চাল বরাদ্দ করেছে, যার ভর্তুকি প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা বলে অনুমান।
আরও পড়ুন: পড়ুয়াদের জন্য সেরা মেমরি টেকনিক: স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কার্যকর উপায়
উপজাত পণ্য DDGS: সয়াবিনের প্রতিদ্বন্দ্বী
ভুট্টা ও চাল থেকে ইথানল তৈরির উপজাত হল DDGS— উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ পশুখাদ্য। ভুট্টা-জাত DDGS-এ থাকে প্রায় ২৮–৩০% প্রোটিন, আর চাল থেকে উৎপন্ন DDGS-এ প্রোটিন প্রায় ৪৫% পর্যন্ত। ২০২৪–২৫ সালে দেশে প্রায় ৫.১৫ মিলিয়ন টন DDGS বাজারে আসবে, যার মধ্যে ভুট্টা থেকে ৩.৯ মিলিয়ন টন এবং চাল থেকে ১.২৫ মিলিয়ন টন।
আগে পশু ও পোলট্রির খাদ্যের প্রধান উৎস ছিল ডি-অয়েল্ড কেক— যা তুলাবীজ, চিনাবাদাম, সরিষা, ধানভুষি ও সয়াবিন থেকে তৈরি হয়। সয়াবিনে তেল মাত্র ১৮–২০%, কিন্তু প্রোটিন ৪০–৪৫% পর্যন্ত, যা একে উচ্চমানের প্রোটিন উৎস করে তুলেছিল। এখন বাজারে DDGS সস্তায় ও সহজলভ্য হওয়ায় সয়াবিন মীলের চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে সয়াবিন DOC বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৩১,০০০–৩২,০০০ টাকায়, যেখানে ভুট্টা-জাত DDGS-এর দাম ১৫,৫০০–১৬,২৫০ টাকা এবং চাল-জাত DDGS-এর দাম ১৯,৫০০–২০,০০০ টাকা। এই দামে সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারীরা প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না।
DDGS-এর সস্তা প্রাপ্যতা ও সয়াবিন মীলের দাম পতনের কারণে মধ্যপ্রদেশের এপিএমসিতে সয়াবিনের দাম নেমে এসেছে ৩,২০০–৪,২০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল, যেখানে এমএসপি ছিল ৪,৮৯২ টাকা। ২০২৫–২৬ খরিফ মৌসুমে নতুন এমএসপি নির্ধারিত হয়েছে ৫,৩২৮ টাকা, তবে কৃষকরা আশাবাদী নন। এর ফলে সয়াবিনের আয়তন কমে ১২.৭ মিলিয়ন হেক্টর থেকে ১২ মিলিয়ন হেক্টরে নেমেছে। বিপরীতে ভুট্টার আয়তন বেড়েছে ৭.৯ মিলিয়ন থেকে ৯.৫ মিলিয়ন হেক্টর পর্যন্ত।
ভুট্টার উন্নত জাতের বীজ ও উচ্চ ফলন (যেমন পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে প্রতি হেক্টরে ৭ টনের বেশি) কৃষকদের আরও উৎসাহিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মত, সরকারকে এখন এমন নীতি নিতে হবে যা প্রোটিনসমৃদ্ধ ফসল যেমন সয়াবিন ও ডালশস্যকে বেশি উৎসাহ দেবে, যাতে আমদানি নির্ভরতা কমে। শেষ পর্যন্ত, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যেন “জ্বালানি নিরাপত্তা”-র কাছে ত্যাগ না হয় — এই ভারসাম্য বজায় রাখাই হবে নীতিনির্ধারকদের মূল চ্যালেঞ্জ।
