আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতে বীমা খাতের গ্রাহকদের মধ্যে ক্রমশই সরকারি অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। আইআরডিএআই (IRDAI)-এর বীমা ভরসা পোর্টাল এবং বীমা ওম্বাডসম্যানের মতো সরকারি চ্যানেলগুলোকে অধিকাংশ মানুষ জটিল ও সময়সাপেক্ষ বলে মনে করছেন। ফলে অনেকে সরাসরি বেসরকারি প্ল্যাটফর্মের দ্বারস্থ হচ্ছেন, যেগুলো দ্রুত ও সহজ সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়।


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বীমা গ্রাহকের কাজে বড় ফাঁক রয়েছে। বেশিরভাগ গ্রাহক তাদের পলিসি ডকুমেন্ট ভালোভাবে বুঝতে পারেন না, অভিযোগ কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে বা তাদের কী অধিকার রয়েছে, সেটাও জানেন না। সরকারি প্ল্যাটফর্ম যেমন বীমা ভরসা বা ওম্বাডসম্যান থাকলেও এগুলো ব্যবহার করতে গেলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। বাস্তবে বেশিরভাগ মানুষ এই চ্যানেলের অস্তিত্ব সম্পর্কেই জানেন না। অনেকে কেবল বীমা কোম্পানির কল সেন্টারে ফোন করে সমস্যার সমাধান খোঁজেন, কিন্তু গ্রিভ্যান্স রেড্রেসাল অফিসার-এর কাছেও পৌঁছান না। অভিযোগ অমীমাংসিত থেকে গেলে অনেকেই ভরসা হারিয়ে ফেলেন। তখনই অনেকে বেসরকারি সমাধান প্ল্যাটফর্মের খোঁজে আসেন।

আরও পড়ুন: ভারতে বাড়ছে বিমানযাত্রীর সংখ্যা, লাভের অংশ কাদের পকেটে ঢুকছে


শুধু ২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকেই ইনসুরেন্স সমাধানে ৪,০০৪টি সমস্যা এসেছে, যার আর্থিক মূল্য ৭৫ কোটিরও বেশি পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৪৫% বৃদ্ধি। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিযোগ স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত, বাকিগুলো জীবন বীমা ও মোটর বীমার অন্তর্ভুক্ত। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত ১৮,০০০-এর বেশি অভিযোগ সামলেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই স্বাস্থ্য বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান ও ভ্রান্ত বিক্রির সঙ্গে যুক্ত।


অন্যদিকে, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩–২৪ সালে আইআরডিএআই-এর বীমা ভরসা পোর্টাল ২.১ লাখের বেশি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। বীমা ওম্বাডসম্যানের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২,৫৭৫টি মামলা। তবে সচেতনতার অভাবে এগুলোর ব্যবহার খুবই সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় বা দেরি হওয়ায় মানুষ বিমুখ হয়ে পড়ছেন। তাছাড়া, ওম্বাডসম্যানের রায় কেবল ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক, বড় অঙ্কের বিরোধ অমীমাংসিত থেকে যায়।


এফওয়াই২৪-এ স্বাস্থ্য বীমা দাবির প্রত্যাখ্যানের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬,০০০ কোটি, যা আগের বছরের তুলনায় ১৯% বেশি। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ দেখানো হয়েছে কাগজপত্রের ঘাটতি বা তথাকথিত ‘নন-ডিসক্লোজার’। কিন্তু গ্রাহকেরা যখন চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থার মধ্যে থাকেন, তখন এই অস্বীকৃতি আর্থিক চাপের সঙ্গে প্রবল মানসিক দুশ্চিন্তাও বাড়িয়ে দেয়। আইআরডিএআই অনেক সময় পোস্ট অফিসের মতো কাজ করে। তারা অভিযোগটি বীমা কোম্পানিকে পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চায়। কোম্পানির ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলেই অভিযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এখানে সক্রিয় হস্তক্ষেপ খুবই সীমিত।


বীমা ব্রোকার ব্যবহার করলে গ্রাহকের প্রিমিয়াম বাড়ে না, কারণ কমিশন প্রিমিয়ামের ভেতরেই অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি ব্রোকারেজের উপর থেকে জিএসটি-ও বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মতে, রিয়েল এস্টেটে যেমন রেরা আনা হয়েছিল, তেমনি স্বাস্থ্য বীমা খাতে একটি একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি হলে অনিয়ম কমবে এবং গ্রাহক সুরক্ষা বাড়বে। নতুন আইআরডিএআই চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ায় আগামী ২–৩ মাসে সংস্কারের জন্য চাপ সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও আশা থাকছে।