আজকাল ওয়েবডেস্ক: রেকর্ডর চূড়া ছুঁয়ে আসার পর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে বিরাট পতন দেখা দিয়েছে। ২২ ক্যারেট ও ২৪ ক্যারেট—উভয় ক্ষেত্রেই এই দামের পতন হয়েছে। মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের আগে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান এই পতনের মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডলারের জোরে দাম চাপের মুখে
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলার সূচক প্রায় ০.৬% বৃদ্ধি পায়। যেহেতু সোনার দাম মার্কিন ডলারে নির্ধারিত হয়, তাই ডলার শক্তিশালী হলে অন্যান্য মুদ্রা ধারণকারী ক্রেতাদের কাছে সোনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি, মার্কিন ট্রেজারি ইল্ড বা সরকারি বন্ডের ফলন সামান্য বাড়ায়, যা সোনার দামের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে।
ফেড প্রধানের বার্তা ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
সোনার বাজারে অনিশ্চয়তার আরেকটি বড় কারণ ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মন্তব্য। মঙ্গলবার তিনি ভবিষ্যতের সুদহার হ্রাস নিয়ে স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত দেননি। বরং তিনি বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি ও কর্মসংস্থানের দুর্বলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন মূল লক্ষ্য। বাজার এখনও ধরে নিচ্ছে যে চলতি বছর দুটি ছোট সুদহার হ্রাস আসতে পারে। একটি সম্ভবত অক্টোবর মাসে এবং আরেকটি ডিসেম্বর মাসে। সাধারণত সুদহার কমলে সোনার চাহিদা বাড়ে, কারণ সোনা নিজে কোনও সুদ আয় দেয় না। তবে বন্ড ইল্ড কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন।
সব চোখ মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্যের দিকে
এখন বাজারের নজর রয়েছে এই সপ্তাহে প্রকাশিত হতে চলা মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্যের দিকে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে চাকরিহীন ভাতার দাবির সংখ্যা এবং শুক্রবার প্রকাশিত হবে পার্সোনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার সূচক, যা ফেডের প্রিয়তম মুদ্রাস্ফীতি সূচক হিসেবে ধরা হয়। এই দুই তথ্য সুদহারের ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে নতুন ইঙ্গিত দিতে পারে।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল পেমেন্টে রেকর্ড করেছে এনপিসিআই, এই কাজে তার নিজের খরচ কত,
এর পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাজারকে প্রভাবিত করছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে দুটি তেল পাম্পিং স্টেশনে হামলা চালিয়েছে। এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নতুন করে তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতিহাস বলছে, এই ধরনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার প্রতি চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সোনার দামের এই পতন প্রমাণ করছে যে ধাতুটি কতটা সংবেদনশীল ডলারের দিকনির্দেশ, সুদহার সম্পর্কিত প্রত্যাশা এবং বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর। যদিও দাম রেকর্ড উচ্চতা থেকে খানিকটা পিছিয়েছে, বিনিয়োগকারীরা এখনও সতর্কভাবে অপেক্ষা করছেন মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনার জন্য। কারণ যে কোনও নতুন সংকেতই মুহূর্তের মধ্যে বাজারের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সোনার দাম কিছুটা নরম হলেও বাজারে অস্থিরতা বহাল। ডলারের শক্তি, সুদহারের প্রত্যাশা এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি মিলিয়ে সোনার দিকনির্দেশ এখনই নিশ্চিত নয়। তবে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধাতুটির দীর্ঘমেয়াদি গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ রয়েছে, এবং আসন্ন মার্কিন অর্থনৈতিক তথ্যই বাজারের পরবর্তী গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা নেবে।
