আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরিসংখ্যান অনুসারে, ৩৫ শতাংশ প্রবীণ-প্রবীণাই নিজের ছেলের আচরণে হয়রানির শিকার। মারধর, নির্যাতন-সহ অন্যান্য হেনস্তার সম্মুখীন হন। ২১ শতাংশ বয়স্করা পুত্রবধূদের হাতে নির্যাতনের শকার। এই বিবেচনা করে, ভারত সরকার ২০০৭ সালে পিতামাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের যত্ন ও কল্যাণ আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি মূলত বয়স্কদের চাহিদা তুলে ধরার জন্য, তাঁদের পর্যাপ্ত যত্ন প্রদান করার জন্য এবং নির্যাতন ও অবহেলা থেকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আইনটি বয়স্কদের এই আত্মবিশ্বাস প্রদান করে যে তাদের সম্পত্তি এবং সন্তানদের নিরাপদে দেখাশোনা করা হবে।

আইন অনুসারে, বাবা-মা বা প্রবীণ ব্যক্তিরা 'নগদ বন্দোবস্ত'-এর মাধ্যমে তাঁদের সন্তান বা ভাইবোনদের তাঁদের সম্পত্তি দিতে পারেন। কম রেজিস্ট্রেশন ফি থাকার কারণে এই পদ্ধতিটি আরও বেশি করে ব্যবহৃত হচ্ছে। উপহারের দলিলগুলিতে, বয়স্ক ব্যক্তিরা তাদের ভবিষ্যতের যত্ন নিশ্চিত করার জন্য শর্তও যোগ করতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই, প্রতিভাবান সন্তান বা পরিবারের সদস্যরা বয়স্কদের যথাযথ যত্ন নেন না। ফলস্বরূপ, বয়স্কদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেগুলির উপর রায় দেওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দেয়। ছেলে কেশবন এবং চার মেয়ের মধ্যে বিরোধের জেরে নাগপট্টিনাম জেলার ৮৭ বছর বয়সী নাগলক্ষ্মী তাঁর সম্পত্তি কেবল কেশবনকে দিয়েছিলেন। কেশবনের প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের কারণে, তিনি কোনও শর্ত ছাড়াই সম্পত্তি দানপত্র করেছিলেন। কেশবনের মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্রবধূ আদালতে একটি আবেদন করেন যাতে অভিযোগ করা হয় যে- তিনি কেশবনের যথাযথ যত্ন নেননি। এই আবেদনের শুনানি করে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট রায় দেয় যে- দানপত্র কোনও শর্ত ছাড়াই দেওয়া হলেও, বয়স্কদের যত্ন না নেওয়া সন্তানদের দেওয়া সম্পত্তির জন্য দলিলটি বাতিল করা যেতে পারে।

শর্তসাপেক্ষে লিখিত বন্দোবস্ত দলিলের ক্ষেত্রে, কেবলমাত্র যিনি দলিলটি জারি করেছেন তিনিই নিবন্ধনের জন্য একটি বাতিলকরণ দলিল জমা দিতে পারেন, স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে গ্রহীতা সেই শর্তগুলি পূরণ করেননি। এই রায় নিশ্চিত করে যে, যেসব ক্ষেত্রে বয়স্কদের ভবিষ্যতের যত্নের জন্য তাঁদের উপর আরোপিত শর্ত লঙ্ঘিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে বাতিলকরণ দলিলের মাধ্যমে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে।

এই রায় বয়স্কদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সম্পত্তির দানপ্তর কোনও শর্ত না থাকলেও, বয়স্কদের যত্ন না নেওয়া চেলে-মেয়েদের দেওয়া সম্পত্তি বাতিল করা যেতে পারে। এটি আরও বলেছে যে, যেসব ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে সম্পত্তিদানপত্র করা হয়, যদি সেই শর্তগুলি বজায় না থাকে, তাহলে বাতিলকরণ দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি নথিভুক্ত করা যেতে পারে।