আজকাল ওয়েবডেস্ক: ক্লাসে 'ব্যাকবেঞ্চার' কথাটি শুনলেই অনেকের হয়তো চোখেই ভেসে ওঠে এমন কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের মুখ, যারা নিজেদের ক্লাসে একটু পড়াশুনায় কমজোরি বা 'দুষ্টু'। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থাকা ভাল-খারাপের এই 'ভেদাভেদ' দূর করার জন্য এবার এক অভিনব উদ্যোগ নিল মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ব্লকের ৫৬ নম্বর গোপালনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগ বৃদ্ধি এবং পড়াশোনার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াতে স্কুল কর্তৃপক্ষ 'ব্যাকবেঞ্চার' প্রথাই তুলে দিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদের ওই স্কুলের সমস্ত ছাত্রছাত্রী এখন 'ফ্রন্টবেঞ্জার'। সমস্ত ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নজরে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।
প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলের ১৫৬ জন ছাত্রছাত্রীকে অর্ধবৃত্তাকারে তাদের নির্দিষ্ট শ্রেণিকক্ষে বসাচ্ছেন শিক্ষক- শিক্ষিকারা। তার ফলে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চোখের সামনে থাকছে। স্কুলে আর কেউ 'ব্যাকবেঞ্চার' নেই।
ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোহন অধিকারী বলেন, 'সম্প্রতি বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে দক্ষিণ ভারতের একটি স্কুলের ছবি খুব ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে একজন শিক্ষক সমস্ত ছাত্রছাত্রীদেরকে চোখের সামনে রাখার জন্য 'ব্যাক বেঞ্চ' প্রথা তুলে দিয়েছেন। এই ছবিটি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও নিজেদের স্কুলে 'ব্যাক বেঞ্চ' প্রথা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'বরাবরই আমরা দেখেছি স্কুলে যারা ভাল ছাত্র-ছাত্রী তারা সামনের বেঞ্চগুলোতে বসে আর যারা অপেক্ষাকৃতভাবে একটু দুর্বল তারা সামনের আসনগুলো ফাঁকা থাকলেও সেখানে না বসে পেছনের আসনগুলোতে গিয়ে বসে।'
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, 'দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি শিক্ষক-শিক্ষিকারা শ্রেণিকক্ষে যখন ক্লাস নেন সামনের বেঞ্চে বসা ছাত্রছাত্রীরাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশে বেশিরভাগ প্রশ্ন করে থাকে এবং তারাই বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। পেছনের সারিতে বসা ছাত্রছাত্রীরা আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছুটা উপেক্ষিত থেকে যায়।'
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই 'ব্যাকবেঞ্চার' প্রথা বন্ধ করার জন্য এবার উদ্যোগী হয়েছে গোপালনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু'জন শিক্ষক এবং দু'জন শিক্ষিকা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, 'আমাদের স্কুলে মোট আটটি ঘর রয়েছে এবং সেগুলোতে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সেই সুবিধা ব্যবহার করে আমরা সমস্ত শ্রেণি কক্ষগুলো থেকে 'ব্যাকবেঞ্চ' তুলে দিয়েছি। ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে শিক্ষকের চোখের সামনে থাকতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে বেঞ্চগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে সাজিয়ে সেখানে তাদের বসানো হচ্ছে।'
নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে পারছেন তা মেনে নিয়েছেন রোহনবাবু। তিনি বলেন, 'আগে হয়তো পেছন বেঞ্চে বসে কিছু ছাত্র-ছাত্রী একটু 'দুষ্টুমি' করত। এখন সকল ছাত্রছাত্রী আমাদের চোখের সামনে বসে থাকার জন্য তাদের সেই প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে। তার বদলে আমাদের পড়ানো এবং প্রশ্ন-উত্তরে তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।'
ওই প্রধান শিক্ষক আরও জানিয়েছেন, এই নতুন ব্যবস্থা চালু করার পর তার ছবি শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কাছেও পাঠিয়েছেন। তাঁদের এই উদ্যোগ শিক্ষা দপ্তরের সাধুবাদ কুড়িয়েছে।
ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়সী মণ্ডল বলেন, 'আগে আমরা সামনে-পেছনে যেমন খুশি বসতাম। অনেক সময় পড়াশোনা বুঝতে অসুবিধা হলেও লজ্জার কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে বলতে পারতাম না। নতুন এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর আমরা সবাই শিক্ষকদের সামনেই বসছি। আমাদের সকলকে শিক্ষকরা প্রশ্ন করছেন এবং কেউ 'ব্যাকবেঞ্চে' লুকিয়ে থাকতে পারছে না।'
প্রিয়াংশু মণ্ডল নামে তৃতীয় শ্রেণির অপর এক ছাত্র বলেন, 'রোজ সামনের বেঞ্চে বসতে পারছি, আমার তো খুব ভাল লাগছে।'
