আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুন্দরবন মানেই রহস্যে ঠাসা। জল থেকে জঙ্গল, কত রকম রহস্য যে এখানে লুকিয়ে আছে তা এখনও জেনে ওঠা যায়নি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো থেকে 'ঐতিহ্যবাহী' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাধারণের কাছে এই এলাকা জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘের জন্য পরিচিত হলেও এর প্রতিটি আনাচে কানাচে লুকিয়ে রয়েছে অজস্র রহস্য‌। আছে অসংখ্য জীববৈচিত্র্য। সম্প্রতি তারই মধ্যে নতুন একটি প্রাণী খুঁজে পেলেন জীব বিজ্ঞানীরা। নেকড়ে মাকড়সা বা উল্ফ স্পাইডার। এই মাকড়সা 'লাইকোসিডে' পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই আবিষ্কার শুধু জীববৈচিত্র্যের দিকেই নয়, পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কলকাতার জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জেডএসআই) গবেষক বিজ্ঞানীরা সাগরদ্বীপ থেকে এই নতুন প্রজাতির মাকড়সাটিকে চিহ্নিত করেছেন। 

জেডএসআই-এর ডিরেক্টর ডঃ ধৃতি ব্যানার্জি বলেন, 'প্রকৃতিতে নতুন আবিষ্কার শেখায় যে প্রকৃতি এখনও কত কিছু লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেইসঙ্গে এই বার্তাও দেয় - প্রাকৃতিক এই ঐশ্বর্য আমরা হারাতে বসেছি।' 

দেখে নেওয়া যাক এই মাকড়সার বৈশিষ্ট। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মাকড়সা সুযোগসন্ধানী শিকারী। শিকারের খোঁজ পেলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বা শিকারের সঙ্গে দূরত্ব যদি অল্প হয় তবে তাকে ধরতে তাড়া করে। এমনকী এরা গর্তের মুখে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকে শিকারের জন্য। এদের আটটি চোখের মধ্যে দুটি চোখ বড় এবং এর ফলে তাদের শিকার দূর থেকে দেখতে সুবিধা হয়। কখনও যদি মানুষকে কামড়ায় তবে সেটা প্রাণঘাতী না হলেও সমস্যা কিন্তু তৈরি করতে পারে। যেখানে এরা কামড়ায় সেই জায়গাটা লালচে হয়ে ওঠে। শুরু হয় চুলকানি এবং তৈরি হয় ক্ষত। যদিও এরা মানুষকে তখনই কামড়ায় যখন নিজেকে আক্রান্ত মনে করে। 

এই মাকড়সার একটা বড় গুন হল প্রকৃতি রক্ষায় এর ব্যবহার। বাগান এমনকি ঘরেও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে এর ব্যবহার করা যায়। এরা আরামসে পিঁপড়ে, আরশোলা, অন্যান্য পোকা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিকটিকি এমনকি ব্যাঙও শিকার করতে পারে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এর ব্যবহার হয়ে উঠতে পারে অনেকবেশি বিজ্ঞানসম্মত। 

আরও পড়ুনঃ মা হওয়া নিয়েই প্রশ্ন? এক মুহূর্তে দক্ষ পেশাজীবীকে চাকরি থেকে বাতিল করলেন এইচ আর, ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য 

গবেষকরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসের ফলে এই মাকড়সার অস্তিত্ব ভবিষ্যতে সংকটে পড়তে পারে। সেজন্যই তাঁরা এই আবিষ্কারকে শুধু একটি বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবেই দেখছেন না। বরং এর সঙ্গে দিচ্ছেন সংরক্ষণ ও সচেতনতার এক জোরালো বার্তা। সুন্দরবনের মতো জীববৈচিত্র্যে ভরপুর অঞ্চল নিয়ে আরও গবেষণা ও সুরক্ষার দাবিতে এই কাজ এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

আরও পড়ুনঃ হিমাচল প্রদেশ ফের খবরের শিরোনামে, বিপর্যস্ত জনজীবন, বন্যার পরবর্তী ধ্বংসাবশেষ প্রকাশ্যে আসতেই আঁতকে উঠল সবাই