আজকাল ওয়েবডেস্ক: একের পর এক। কারোর জিভে তো আবার কারোর গালে। সেখান থেকে ধরে নিয়েছে চোয়াল। দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত জায়গায় বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। অস্ত্রোপচার করা খুবই জরুরি। অথচ চাপ এমন যে কাউকে এক মাস তো কাউকে দু'মাস পরেও অস্ত্রোপচারের 'ডেট' দেওয়া হচ্ছে। ওরাল বা মুখের ক্যান্সার (oral cancer)। যার বৃদ্ধি চিন্তিত করে তুলছে চিকিৎসকদের। 

 


মুখের ক্যান্সার সম্পর্কে একটা ধারণা আছে শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্য সেবন করলেই এই রোগে আক্রান্ত হয়। এনআরএস হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি (plastic surgery) বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. অমিতাভ দে বলেন, 'অন্তত ১০ শতাংশ রোগী আমরা পাচ্ছি যাদের নেশা করার কোনও রেকর্ড নেই। অথচ তাঁরা এই রোগের শিকার।' 

 


তাঁর কথায়, শুধুমাত্র এনআরএস হাসপাতালেই আমরা সপ্তাহে চার থেকে পাঁচজন মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, 'এটা শুধু এই হাসপাতালেই নয়। কলকাতার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও সপ্তাহে এই সংখ্যক রোগী পাচ্ছেন চিকিৎসকরা।'  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার এবং তারপর তাঁদের প্রয়োজনীয় অঙ্গের পুনর্গঠন করেন চিকিৎসকরা। 

 


ডা.অমিতাভ দে জানান, বিষয়টি কিন্তু এমন নয় এখন অস্ত্রোপচার হল আর তিনদিন বাদে অঙ্গ পুনর্গঠন করে দেওয়া হল। দুটো কাজ একসঙ্গেই চলে। চিকিৎসকদের একটি দল যখন রোগাক্রান্ত অঙ্গে অস্ত্রোপচার করেছেন তখন আর একটি দল ওই রোগীর অঙ্গ থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে অঙ্গের পুনর্গঠন করেন। 

 


দেখা যাচ্ছে, জিভের পাশাপাশি চোয়ালেও থাবা বসাচ্ছে ক্যান্সার। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, যারা তামাক জাতীয় দ্রব্য দীর্ঘক্ষণ মুখে রেখে দিচ্ছেন তাঁদের মুখে ক্যান্সার আক্রমণ করার পর ধীরে ধীরে চোয়াল ধরে নিচ্ছে। এটা গাল থেকে শুরু হয়েই চোয়ালে পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। 

 


কীভাবে একজন রোগী বুঝবেন তিনি মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মুখের ভেতর যে কোনও পরিবর্তন যেমন সাদা বা লাল দাগ বা কিছু খেলেই ঝাল লাগা বা জ্বালা করা এবং জিভের কোথাও কোনও গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড তৈরি হলেই সেটা চিকিৎসকের নজরে আনতে হবে। জিভের নমনীয় ভাব যদি কমতে থাকে তবে সেটাও চিকিৎসকের নজরে আনা জরুরি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। দ্রুত এবং প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু হলে রোগমুক্তির সম্ভাবনাটা অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন তাঁরা। 

 

 

এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা শহরের পাশাপাশি গ্রাম বা মফস্বলেও যথেষ্ট সংখ্যক বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেহেতু জেলায় এই ধরনের রোগ সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি তাই শহরের হাসপাতালেই ভিড় করছেন রোগীরা। 

 


ডা. অমিতাভ দে জানিয়েছেন, 'সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন এমন রোগীও যেমন আছে তেমনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার তামাকের নেশায় ঢুকে ফের আক্রান্ত হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। আসলে চিকিৎসার সঙ্গে সচেতনতাও জরুরি।'