আজকাল ওয়েবডেস্ক: সন্তান প্রসবের নির্ধারিত দিনেই এসআইআরের (SIR) শুনানিতে হাজির হতে হল এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে। নথিপত্র হাতে নিয়ে ভিড়ে ঠাসা বিডিও অফিসে উপস্থিত সেই প্রসূতিকে দেখে রীতিমত নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তড়িঘড়ি শুনানি সম্পন্ন করে তাঁকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা- ২ ব্লকে।
শনিবার এসআইআরের প্রথম দফার শুনানির দিন বিডিও অফিসের সভাকক্ষে নজরে আসে এই দৃশ্য। উপস্থিত ছিলেন বিডিও-সহ ব্লকের ৬ জন এআরও, কমিশন নিযুক্ত ৬ জন মাইক্রো অবজার্ভার এবং বিভিন্ন বুথের বিএলওরা। শুনানির ডাক পেয়ে হাজির হন বয়স্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে সদ্য চোখের অপারেশন করানো ভোটাররাও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্বে মোট ৭০ জনকে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। এই তালিকায় ছিলেন ২৭ বছরের বন্দনা মণ্ডল। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি শুনানি কেন্দ্রে পৌঁছন। বিডিও অফিসের নিচতলায় একটি চেয়ারে বসে ছিলেন বন্দনা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তাঁর স্বামী শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল বিএলও-র সঙ্গে দেখা করতে যান।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। দাবি ওঠে, জরুরি পরিস্থিতিতে বাড়িতে গিয়ে শুনানির নির্দেশিকা থাকলেও কেন বিডিও অফিসে আসতে হল গর্ভবতী মহিলাকে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্দনার শ্বশুরবাড়ি কুঁয়াপুরে হলেও তাঁর বাপের বাড়ি চন্দ্রকোনার জয়ন্তীপুরে। সেখানকার ১৪৯ নম্বর বুথের বিএলও শুভাশিস গোস্বামী বন্দনার বাপের বাড়িতেই এনুমারেশন ফর্ম দিয়ে যান। এরপর ২০০২ সালের বাবার ভোটার তালিকার ভিত্তিতে ফর্ম পূরণ করা হয়েছিল। বিয়ের পর ঠিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়েই ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য শুনানির নোটিশ আসে।
২২ ডিসেম্বর বন্দনার বাপের বাড়িতে শুনানির নোটিশ দিয়ে যান বিএলও। সেখানে ২৭ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও, ওই দিনই বন্দনার ডেলিভারির নির্ধারিত তারিখ ছিল বলে দম্পতি জানিয়েছেন। অভিযোগ, বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চস্তরে জানানো হয়নি বলেই শুনানি কেন্দ্রে আসতে বাধ্য হন অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে, এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শুনানি কেন্দ্রে উপস্থিতির খবর পেয়েই বিডিও, AERO ও মাইক্রো অবজার্ভাররা নিচে নেমে আসেন। মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই প্রয়োজনীয় যাচাই সম্পন্ন করে দ্রুত তাঁকে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। সুস্থ অবস্থাতেই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শুভ্রপ্রকাশ।
যদিও সংশ্লিষ্ট বিএলও-র দাবি, নোটিশ দেওয়ার সময় ডেলিভারির তারিখ সম্পর্কে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় ভোটার তালিকায় নাম সংশোধনের জন্য স্বামীর সঙ্গে শুনানিতে এসেছিলেন বন্দনা।
শুনানি শেষে বন্দনা মণ্ডল জানান, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা কাটায় স্বস্তি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “এসআইআরের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটারের দায়িত্ব পালন করেছি।” অন্যদিকে তাঁর স্বামী শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল বলেন, “আজ শুনানির দিন ছিল, নাম ঠিক করার জন্য ডাকা হয়েছিল। স্ত্রীর ডেলিভারির ডেটও ছিল। বিষয়টি বিএলও ও কমিশনের লোকজনকে জানানো হয়। দ্রুত কাজ সেরে দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ।”
চন্দ্রকোনা - ২ ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানান, “ম্যাপিং সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ওই মহিলাকে ডাকা হয়েছিল। তিনি আসার পর আমরা বিষয়টি বুঝে দ্রুত শুনানি সম্পন্ন করে তাঁকে ছেড়ে দিই। আগে জানানো হলে বাড়িতেই শুনানির ব্যবস্থা করা যেত।” এই ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এলাকায়।
