আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর ওড়িশায় অমানবিক অত্যাচার থামার কোনও লক্ষণ নেই। প্রাণ বাঁচাতে এবার জঙ্গলে আশ্রয় নিতে হলো মুর্শিদাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিককে। ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বরের কাছে চন্দ্রশেখরপুর থানা এলাকায়।
বুধবার সম্বলপুরে সোহেল রানা নামে এক যুবককে পিটিয়ে খুন করার পর ওড়িশার ঝারসুগুদা জেলায় আক্রান্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগে এবার চন্দ্রশেখরপুর থানা এলাকায় আক্রান্ত হলেন মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা থানা এলাকার এক পরিযায়ী শ্রমিক।
ওড়িশায় কয়েকজন বাসিন্দার হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর রফিকুল শেখ নামে ওই ব্যক্তি নিজের প্রাণ বাঁচাতে দীর্ঘক্ষণ একটি জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন। এরপর কোনওক্রমে সেখান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে ট্রেন ধরে রবিবার সকালে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা এসে পৌঁছেছেন। আজ সকাল থেকে স্থানীয় কানাপুকুর হাসপাতালে রফিকুলের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। রফিকুলের বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, মানুষের হাত থেকে বাঁচতে সাপখোপে ভরা একটি জঙ্গলে দীর্ঘক্ষণ লুকিয়েছিল সে। সেখানে বিষাক্ত সাপের কামড়েও রফিকুলের মৃত্যু হতে পারতো।
প্রায় ৪০ দিন আগে ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত চংটা পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা, রফিকুল শেখ আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য ভুবনেশ্বর থানার অন্তর্গত চন্দ্রশেখরপুর এলাকায় একটি বহুতল নির্মাণের কাজ করতে গিয়েছিলেন।
গত তিনদিন আগে সারাদিনের খাটাখাটনি শেষে ভাত খেয়ে রফিকুল এবং আরও পাঁচজন শ্রমিক যখন নিজেদের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময়ে কোনওরকম প্ররোচনা ছাড়াই তাদের উপর ওড়িশায় বেশ কিছু বাসিন্দা হামলা চালান বলে অভিযোগ।
মুর্শিদাবাদের বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হওয়ার পর সেখানে স্থানীয় পুলিশের কোনওরকম সাহায্য পায়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে। এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় রফিকুল ওড়িশা ছাড়তে বাধ্য হন। প্রাণ বাঁচিয়ে নিজের গ্রামে ফেরার পর রবিবার থেকে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে রফিকুলের চোখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে।
আহত রফিকুল শেখ বলেন," দিন দুয়েক আগে সারাদিনের কাজের শেষে আমরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ করে কয়েকজন আমার ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় আমাকে তুলে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। কেউ আমার কাছে কোনও নথি দেখতে চায়নি। বাংলাদেশি সন্দেহে আমাকে মারধর করা হয়েছে। "
ওই ব্যক্তি বলেন ,"নির্মীয়মান বহুতলের কাছে একটি বাড়িতে আমরা ৬ জন থাকতাম। আমাদের মধ্যে রিপন শেখ নামে এক যুবককে প্রথমে দুষ্কৃতীরা মারধর করা শুরু করে। রিপনকে মার খেতে দেখে ওই ঘরে থাকা চারজন শ্রমিক কোনও ক্রমে সেখান থেকে দৌড়ে পালায়।" কিন্তু রফিকুল শেখ ঘুমিয়ে থাকায় সে এই ঘটনার কিছুই বুঝতে পারেননি। এরপরই ওড়িশার কয়েকজন বাসিন্দা তাঁকে ঘুম থেকে তুলে বেধড়ক মারধর করা শুরু করে। ওই ব্যক্তি দাবী করেন, তাঁর যৌনাঙ্গের মধ্যে লোহার শিক ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
রফিকুল বলেন," ওড়িশার বাসিন্দাদের কাছে মার খাওয়ার পর প্রাণে বাঁচতে আমি কাছেই একটি জঙ্গলে লুকিয়ে পড়েছিলাম। দুষ্কৃতীরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বার হয়ে আসি। শনিবার রাতে আমি ওড়িশা থেকে ট্রেনে চাপি, রবিবার মুর্শিদাবাদে এসে পৌঁছেছি।"
ভগবানগোলার তৃণমূল বিধায়ক রিয়াত হোসেন সরকার বলেন," যেখানেই বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে সেখানে বাঙালি এবং বাংলা ভাষায় কথা বললে তাঁদের উপর হামলা হচ্ছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনার নিন্দার কোনও ভাষা নেই।" তিনি জানান ,"মুর্শিদাবাদের সুতির বাসিন্দা সোহেল রানাকে পিটিয়ে মারার ঘটনা এবং ভগবানগোলার রফিকুল ও অন্যান্য বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ভগবানগোলায় তৃণমূলের তরফ থেকে একটি বড় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হচ্ছে।"
