আজকাল ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আলোচনার উদ্দেশ্য হল, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে মতামত, অভিযোগ এবং প্রস্তাব গ্রহণ করা, যাতে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী হয়। দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে যে, কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন চাইলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে সময় নিয়ে বৈঠকের অনুরোধ করতে পারবে, তবে সেই অনুরোধ যুক্তিসঙ্গত সময় আগে জানাতে হবে। কারণ নির্বাচনী আধিকারিকের পূর্বনির্ধারিত দায়িত্ব, বৈঠক ও সফরের ব্যস্ততা থাকে। অনুরোধের সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য এবং আলোচ্য বিষয় লিখিতভাবে জানাতে হবে বলে নির্দেশে স্পষ্ট করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন ২৮ নভেম্বর একটি পৃথক নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া কার্যকর করতে ১২ জন আইএএস আধিকারিককে নির্বাচনী রোল পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। কমিশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক বিস্তার, সীমান্তবর্তী জেলা এবং বিশাল ভোটারসংখ্যার কথা মাথায় রেখে এই অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক নিয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কমিশন জানিয়েছে, এই পর্যবেক্ষকরা জেলা পর্যায়ে ভোটার তালিকা সংশোধন, পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ডিইও ও ইআরও-দের কাজে সহায়তা করবেন। শুধু তাই নয় প্রয়োজন হলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে নির্দেশ দেবেন।
নিযুক্ত আধিকারিকদের মধ্যে আছেন স্মিতা পাণ্ডে (পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান ও বীরভূম), তন্ময় চক্রবর্তী (মুর্শিদাবাদ ও মালদা), রণধীর কুমার (উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতা উত্তর), সি. মুরুগান (দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা দক্ষিণ), আর. অরুণ (কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি), রাজীব কুমার (হাওড়া), নীলম মীণা (পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম), অশ্বিনী কুমার যাদব (উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর), নিরঞ্জন কুমার (দার্জিলিং ও কালিম্পং), দেবী প্রসাদ করণম (পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া), রচনা ভগত (নদিয়া) এবং ড. বিষ্ণুব্রত (হুগলি)। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, এই পর্যবেক্ষকদের সফর, পর্যবেক্ষণ এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে স্থির করতে হবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কমিশন গত ৪ নভেম্বর এবং ২৭ অক্টোবর জারি করা বিশেষ নির্দেশিকা যে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এই পর্যবেক্ষকদের। নির্বাচনী রোল সংশোধন সংক্রান্ত কাজের স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপকে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনার সুযোগ এবং নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষক নিয়োগ- দুই উদ্যোগই আসন্ন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও সুসংগঠিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
