ঘুম ভাঙতে দেরি হওয়া মাঝে মাঝে বিলাসিতা মনে হলেও, নিয়মিত দেরিতে জাগা নীরবে কমিয়ে দিতে পারে শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান—ভিটামিন ডি। সূর্যের আলো ত্বকে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই এই হরমোন–জাতীয় ভিটামিন তৈরি হয়, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, মেজাজ থেকে শুরু করে হাড়ের শক্তি এবং বিপাকক্রিয়া—সব কিছুর উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সকালে সূর্যের আলো পাওয়ার সেরা সময়টা বারবার মিস করলে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না।
সকালের রোদ না পাওয়া—বিজ্ঞানের কী বলে
বিশেষজ্ঞ ড. প্রদীপ নারায়ণ সাউ বলেন, “বেশি দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে সকালে সূর্যের আলোয় যে আদর্শ মাত্রার ইউভিবি রশ্মি থাকে, তা আর পাওয়া যায় না।” তাঁর মতে, দিনের পরের দিকে সূর্যালোক হয়তো অত্যন্ত তীব্র বা এমনভাবে ভারসাম্যহীন হয় যে শরীর তখন ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারে না। ফলে সময়ের সঙ্গে এর মাত্রা কমতে থাকে।
ভিটামিন ডি–র ঘাটতি শুধু হাড়কে নয়, পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। ড. সাউ বলেন, “ক্লান্তি, ব্রেন ফগ, ত্বক শুষ্ক হওয়া, চুল নরম এবং ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া—এসবই ভিটামিন ডি–র ঘাটতির লক্ষণ।”
দীর্ঘমেয়াদে কেন জরুরি ভিটামিন ডি
অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ড. সুরেন্দ্র উ কামাথ জানান, ভিটামিন ডি কেবলমাত্র একটি ‘সানশাইন নিউট্রিয়েন্ট’ নয়। এটি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। যা শক্তিশালী হাড় ও দাঁতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দীর্ঘমেয়াদি ঘাটতি শিশুদের রিকেট, প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
তাঁর কথায়, “রোদ, সুষম খাদ্য এবং সাপ্লিমেন্ট—সবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত ভিটামিন ডি–ও শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই ব্যক্তিগত পরামর্শ জরুরি।”
ঘুম–জেগে থাকার ছন্দ এবং শীতকালের রোদ
পুষ্টিবিদ অদিতি প্রসাদ আপ্তে জানান, সময় ভিটামিন ডি–র সংশ্লেষণে বড় ভূমিকা রাখে। তাঁর কথায়, “সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে ভিটামিন ডি স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—এই সময়ে ইউভিবি রশ্মি শক্তিশালী হয় এবং ছায়া সবচেয়ে ছোট থাকে।”
দুপুরের দিকে ঘুম থেকে উঠলে এই জরুরি সময়ের সূর্যালোকটাই কম পাওয়া যায়। শীতে দিন ছোট হওয়া এবং ঘরের ভিতরে বেশি সময় কাটানোর কারণে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ির ছন্দ নষ্ট হয়—ফলে শক্তির মাত্রা কমে, শরীর হয় অলস, মানসিক অবনতি ঘটে এবং মাংসপেশির পুনরুদ্ধার ধীর হয়ে যায়—যা ভিটামিন ডি ঘাটতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ভিটামিন ডি স্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর উপায়
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ঘুম থেকে ওঠার পর ১০–১৫ মিনিট রোদে দাঁড়ানো
সকালে সময় না পেলে দুপুরে কিছুক্ষণ সূর্যালোক নেওয়া
ভিটামিন ডি–সামৃদ্ধ খাবার—ডিম, মাছ, ফোর্টিফায়েড দুধ ইত্যাদি খাওয়া
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট
নিয়মিত ও স্থির ঘুম–জাগরণের রুটিন বজায় রাখা
নিয়মিত দেরিতে ওঠা প্রথমে ক্ষতিকর মনে না হলেও দিনে দিনে তা রোদে থাকার সময় কমিয়ে দেয় এবং শরীরের স্বাভাবিক ভিটামিন ডি তৈরির ক্ষমতা কমায়। আবার আগের রুটিনে ফেরা, নিয়মিত সূর্যালোক পাওয়া এবং সুষম খাদ্য—এই সহজ অভ্যাসগুলি দীর্ঘমেয়াদে রোগপ্রতিরোধ, হাড়ের স্বাস্থ্য, শক্তি এবং মেজাজ ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
