পেয়ারা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। কম ক্যালোরি ও উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকার কারণে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। পেয়ারা নানা উপায়ে খাওয়া যায়—কাঁচা, পাকা, চাটনি হিসেবে, আবার জ্যাম বানিয়েও। শুধু ফলই নয়, পেয়ারা পাতাও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পেয়ারা পাতার নির্যাস খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে হৃদস্বাস্থ্য, হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হতে পারে।
তবে মনে রাখতে হবে—এই ফলে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা সবার শরীরের সঙ্গে মানানসই নয়। ফলে প্রশ্ন আসে—কারা পেয়ারা খাওয়ায় সতর্ক থাকবেন? জেনে নেওয়া যাক।
পেয়ারা–তে থাকা পুষ্টিগুণ
পেয়ারা সমৃদ্ধ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও পটাশিয়ামে। এক পরিবেশন পেয়ারা থাকে মাত্র ১১২ ক্যালোরি এবং প্রায় ২৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। এতে ফাইবার থাকে প্রায় ৯ গ্রাম এবং এতে স্টার্চ নেই বললেই চলে। এক কাপ কুচনো পেয়ারা থেকে মিলতে পারে প্রায় ১.৬ গ্রাম ফ্যাট এবং প্রায় ৪ গ্রাম প্রোটিন—যা অনেক ফলের তুলনায় বেশি।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে পেয়ারা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এছাড়া ফোলেট এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো পুষ্টি উপাদানও প্রচুর থাকে।
কারা পেয়ারা খাওয়ায় সতর্ক থাকবেন?
যাদের পেট ফোলার সমস্যা আছে
পেয়ারায় প্রচুর ভিটামিন সি এবং ফ্রুক্টোজ থাকে। এই দু’টির অতিরিক্ত গ্রহণে অনেকে পেট ফোলার সমস্যায় ভোগেন। যেহেতু ভিটামিন সি জলে দ্রবণীয়, শরীর একসঙ্গে এর অতিরিক্ত অংশ শোষণ করতে পারে না—ফলে পেট ফুলে ওঠে।
ফ্রুক্টোজের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। প্রায় ৪০% মানুষ ফ্রুক্টোজ–ম্যালঅ্যাবজর্পশনে ভোগেন, যেখানে শরীর প্রাকৃতিক এই চিনি শোষণ করতে না পেরে অন্ত্রে জমা করে—ফলে গ্যাস, পেট ফোলা এবং অস্বস্তি হয়। বিশেষত যাঁরা পেয়ারা খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়েন, তাঁদের মধ্যে সমস্যা বেশি দেখা যায়।
ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম রয়েছে যাদের
উচ্চমাত্রার ফাইবার সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে আইবিএস–এ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে। কারণ ফ্রুক্টোজ সঠিকভাবে শোষিত না হওয়ায় ডায়রিয়া, ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে। তাই আইবিএস রোগীদের অল্প পরিমাণে পেয়ারা খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস রোগী
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার ফলে পেয়ারা ডায়াবেটিকদের কাছে নিরাপদ মনে হলেও, খাওয়ার পর নিয়মিত রক্তশর্করা পরীক্ষা করা জরুরি। ১০০ গ্রাম কাটা পেয়ারায় থাকে প্রায় ৯ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি। অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উত্তম।
কখন এবং কতটা পেয়ারা খাওয়া ভাল?
সাধারণভাবে দিনে একবার পেয়ারা খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী। এর বেশি পরিমাণ অনেকের ক্ষেত্রে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে কিংবা ব্যায়ামের আগে–পরে পেয়ারা খেলে শরীরে বাড়তি শক্তি মেলে। রাতে ফল, বিশেষত পেয়ারা খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভাল—কারণ অনেকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা–সর্দির সমস্যা বাড়তে পারে।
