আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও গৃহস্থালী সামগ্রীর ওপর গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স কমিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ ক্রেতার ওপর চাপ কিছুটা হালকা করা। কিন্তু বাস্তবে বাজারে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অন্য চিত্র। দোকান হোক বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, ক্রেতারা বলছেন—দাম কমেনি, বরং আগের মতোই চোকাতে হচ্ছে পকেট থেকে।
এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ট্যাক্স কমানোর সুফল কি শেষ পর্যন্ত ভোক্তার কাছে পৌঁছচ্ছে? অনেকেই অভিযোগ করছেন, খুচরো দোকানদার থেকে শুরু করে বড় অনলাইন খুচরো বিক্রেতারা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা ভোক্তাকে দিচ্ছেন না। ফলে নীতিগত ছাড় শুধুই কাগজে থেকে যাচ্ছে, কিন্তু কেনাকাটার ঝুড়ি হালকা হচ্ছে না।
এই অবস্থায় সরকার নিজেই হস্তক্ষেপ করেছে। জানানো হয়েছে, খুচরো বিক্রেতা বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যদি জিএসটির হ্রাসকৃত হার সঠিকভাবে কার্যকর না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: সাতটি যুদ্ধ তিনি থামিয়েছেন, ফের দাবি করলেন ট্রাম্প
ভোক্তাদের করণীয়
সরকারি বার্তা স্পষ্ট—ভোক্তারা যেন চুপচাপ অন্যায়ের শিকার না হন। অতিরিক্ত টাকা দিতে হলে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। এর জন্য জাতীয় ভোক্তা হেল্পলাইন (National Consumer Helpline - NCH) বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। জিএসটি-সংক্রান্ত অভিযোগগুলো আলাদা ক্যাটাগরিতে গ্রহণ করা হচ্ছে এবং তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ জানানোর পদ্ধতিও একেবারেই সহজ। ভোক্তারা চাইলে সরাসরি ১৯১৫ নম্বরে ফোন করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে সরকারি ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, ই-মেল এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর সুযোগ। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের বহুভাষিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এই প্রক্রিয়াটি ১৭টি ভাষায় উপলব্ধ করা হয়েছে। ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শহরের ক্রেতা—সবাই নিজের ভাষায় সহজে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড জানিয়েছে, প্রতিটি বৈধ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে প্রতি মাসে এক লক্ষেরও বেশি অভিযোগ আসছে বিভিন্ন ভোক্তা সমস্যার বিষয়ে। এর মধ্যে জিএসটি-সংক্রান্ত অভিযোগগুলিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযোগ করা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার উপায় নয়। এটি একটি বৃহত্তর ভোক্তা অধিকারের লড়াই। ভোক্তারা যদি নিয়মিত অভিযোগ জানান, তবে বাজারে একটি বার্তা যাবে। সরকারি করছাড় মানে শুধু দপ্তরের ঘোষণাই নয়, এটি সরাসরি ভোক্তার স্বার্থে। খুচরো ব্যবসায়ী ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিও তখন বাধ্য হবে করছাড়ের সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে। অর্থাৎ, অভিযোগ করার মাধ্যমে একজন ভোক্তা যেমন নিজের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে পারেন, তেমনই গোটা বাজার ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়ে। ফলে ভবিষ্যতে অন্য ভোক্তারা একই সমস্যার সম্মুখীন হন না।
যদি সম্প্রতি ঘোষিত জিএসটি কমানোর সুবিধা আপনার কেনাকাটার বিল-এ না দেখা যায়, তবে চুপ করে থেকে ক্ষতির বোঝা টানা প্রয়োজন নেই। অভিযোগ জানানোটাই আপনার অধিকার, আর একইসঙ্গে দায়িত্বও। মনে রাখুন, প্রতিটি অভিযোগ ভোক্তা অধিকারের সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
