আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৬,৭০০ ইউয়ান খরচ করে মাত্র ১.৪ সেমি লম্বা, দুই সপ্তাহেই বাড়ানো হাড় নরম হতেই  আগের উচ্চতায় ফিরে এল চীনের কিশোর। চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের অদ্ভুত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় পড়েছে। ছেলেটি শরীর লম্বা করার চিকিৎসা করাতে ছয় মাসে ১৬,৭০০ ইউয়ান (প্রায় ২,৩৫০ মার্কিন ডলার) খরচ করেছিল। চিকিৎসার ফলে ১.৪ সেন্টিমিটার লম্বা হলেও চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই তার উচ্চতা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে।

ঘটনাটি ঘটেছে সিয়ামেন শহরে। কিশোরটির পদবি হুয়াং। তার বাবা জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলা চিকিৎসায় ছেলের উচ্চতা ১৬৫ সেমি থেকে বেড়ে ১৬৬.৪ সেমি হয়েছিল। কিন্তু আগস্টে চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার পর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই উচ্চতা কমে আবার ১৬৫ সেমি হয়ে যায়। হুয়াং সিনিয়র অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান জানায়, ছেলেটির বয়স অনেক বেশি হয়ে গেছে, তাই শরীর আর "সংশোধন" করা সম্ভব নয়। পরে পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হয়। ক্ষুব্ধ পিতা বলেন, “ওরা যদি আগেই সত্যিটা বলত, এতদিন সময় আর টাকা নষ্ট হতো না।”

চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় সপ্তাহে একবার বা দুই সপ্তাহে একবার ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে পা টেনে প্রসারিত করা হতো এবং বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে হাঁটুর হাড় “সক্রিয়” করার দাবি করা হতো। হুয়াং জানান, কোনও  সপ্তাহে চিকিৎসা বাদ দিলে তিনি লক্ষ্য করতেন ছেলের উচ্চতা কমে যাচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দাবি ছিল— চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থাকায় এ ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘বাতিল করতে হয়েছে বিয়ে, পরিবার ফেলে ছুটতে হয়েছে মাঝপথেই’, ট্রাম্পের ভিসা নির্দেশিকায় ভারতীয়দের অবস্থা জানেন?

চীনের বেইজিং নিউজ–কে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের চিকিৎসা মূলত হাঁটুর হাড় উদ্দীপিত করে শিশুদের লম্বা হতে সাহায্য করে। কিন্তু পেকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্তঃস্রাব বিশেষজ্ঞ উ জুয়েইয়ান স্পষ্ট জানান, জোর করে শরীর টেনে লম্বা করা বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়।

তিনি বলেন, “মানুষ সকালে বিকেলের তুলনায় প্রায় অর্ধ থেকে এক সেন্টিমিটার লম্বা থাকে। কারণ দিনে শরীরের ওজনের কারণে মেরুদণ্ড চাপে ছোট হয় এবং রাতে ঘুমের সময় মেরুদণ্ড শিথিল হয়ে আবার কিছুটা লম্বা হয়।” তার মন্তব্য— “মানুষ কোনো নুডলস নয়। জোর করে টেনে লম্বা করা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক।” উর মতে, প্রাকৃতিকভাবে উচ্চতা বাড়ানোর একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি হলো নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। জিনতত্ত্বও একজন মানুষের উচ্চতা নির্ধারণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। ঘটনাটি নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এক নেটিজেন লিখেছেন, “যদি চিকিৎসাটি সত্যিই কার্যকর হতো, তাহলে পৃথিবীতে খাটো মানুষ থাকত না।” আরেকজনের মন্তব্য— “এটা লজ্জার বিষয় যে কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।”

চিকিৎসা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এটি আদৌ শিশুদের ওপর এ ধরনের চিকিৎসা চালানোর অনুমোদনপ্রাপ্ত কি না, তাও স্পষ্ট নয়। অনেকেই সরকারের কাছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নজরদারি ও শিশুদের উচ্চতা সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রসার দাবি করেছেন। চিকিৎসক সমাজের সর্বসম্মত মত, ব্যয়বহুল এ ধরনের চিকিৎসা পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক এবং শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।