আজকাল ওয়েবডেস্ক: লেজার অস্ত্র বা ডিরেক্টেড-এনার্জি ওয়েপনস বর্তমানে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অন্যতম আলোচিত ক্ষেত্র। উচ্চক্ষমতার এই লেজার ব্যবস্থা কম খরচে দ্রুত আকাশপথে আসা হামলার মোকাবিলা করতে সক্ষম হওয়ায় ভবিষ্যতের যুদ্ধব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে সামরিক পরিকল্পনাবিদ, প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কিংবা অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির কেউই লেজারকে ক্ষেপণাস্ত্রের পূর্ণ বিকল্প হিসেবে দেখছেন না। বাস্তবতার নিরিখে লেজার ও মিসাইল—দু’টির ভূমিকা আলাদা এবং পরিপূরক।


লেজার প্রযুক্তির উদ্দেশ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, সম্পূর্ণভাবে ব্যালিস্টিক বা গাইডেড অস্ত্রকে সরিয়ে দেওয়া নয়। লেজার অস্ত্রের বড় সুবিধা হল লক্ষ্যবস্তুর উপর দ্রুত আঘাত হানা এবং প্রতিবার ব্যবহারে তুলনামূলক কম খরচ। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রের মতো বহুমুখী মিশন করার ক্ষমতা লেজারের নেই। বহু দূরত্বে গিয়ে কাইনেটিক শক্তির মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক আঘাত হানার ক্ষেত্রে এখনও ক্ষেপণাস্ত্রই প্রধান ভরসা।


বর্তমান লেজার ব্যবস্থা কার্যকর মূলত স্বল্প দূরত্বে এবং নির্দিষ্ট ধরনের লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে—যেমন ড্রোন বা ছোট নৌযান। তবে লেজারের কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। বৃষ্টি, কুয়াশা, ধোঁয়া বা ধূলিকণার মতো উপাদান লেজার বিমের গুণমান ও কাজের পরিসর মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে খোলা আকাশে ও দীর্ঘপাল্লার অভিযানে লেজারের ব্যবহার সীমিত হয়ে যায়।


আরও একটি বড় সীমাবদ্ধতা হল লেজারের ‘লাইন-অব-সাইট’ নির্ভরতা। অর্থাৎ, লেজার চালাতে হলে লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে সরাসরি পথ থাকতে হয়। বিপরীতে, ক্ষেপণাস্ত্র সীমার বাইরে গিয়েও আধুনিক গাইডেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে লক্ষ্যভেদ করতে পারে। গভীর আঘাত হানা বা দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এই পার্থক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


উচ্চক্ষমতার লেজার অস্ত্রের জন্য প্রয়োজন প্রচুর বিদ্যুৎ ও শক্তিশালী কুলিং সিস্টেম। এই কারণে ফাইটার জেটের মতো ছোট প্ল্যাটফর্মে লেজার বসানো প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন। যদিও যুদ্ধজাহাজ বা স্থলভিত্তিক যান এই কাঠামো বহন করতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে এমন সীমাবদ্ধতা নেই এবং সেগুলি বিভিন্ন বাহিনীতে সহজেই মোতায়েন করা যায়।


বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে লেজারের প্রসার ঘটলে ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতারাও উন্নত হিট শিল্ড ও প্রতিরোধমূলক প্রযুক্তি যোগ করবে, যা কাইনেটিক অস্ত্রকে আরও টেকসই করে তুলবে। পেন্টাগনের প্রাথমিক মূল্যায়নেও বলা হয়েছে, লেজার ও ক্ষেপণাস্ত্র একে অপরের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করবে।

&t=19s


সব মিলিয়ে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও দূরত্ব, আবহাওয়া এবং শক্তি সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে লেজার অস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় লেজার ও মিসাইল একসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।