আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাস পয়লার আনন্দ মিলিয়ে যেতে না যেতেই ক্রেডিট কার্ডের বিল দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ। অনলাইনে অর্ডার করা অপ্রয়োজনীয় জিনিসের স্তূপ বা সপ্তাহান্তে বন্ধুদের সঙ্গে লাগামছাড়া পার্টি- সঙ্গীর অতিরিক্ত খরচের অভ্যাস বহু সম্পর্কেই অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলেই শুরু হয় তুমুল ঝগড়া, বাড়ে মনোমালিন্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিৎকার বা অভিযোগ না করে, আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আসল কথা হল, বিষয়টিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না দেখে, পারিবারিক সমস্যা হিসেবে দেখলেই তার মোকাবিলা করা সহজ হয়।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে
১। প্রথমেই বুঝতে হবে, সঙ্গী কেন অতিরিক্ত খরচ করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই এর নেপথ্যে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকে। মনোবিদদের মতে, মানসিক চাপ, একঘেয়েমি বা আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে মানুষ ‘রিটেল থেরাপি’-র আশ্রয় নেন। অর্থাৎ কেনাকাটার মাধ্যমে তাঁরা সাময়িক আনন্দ বা তৃপ্তি খোঁজেন। অনেক সময় সামাজিক চাপও এর জন্য দায়ী। বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যের জীবনযাত্রা দেখে নিজের অজান্তেই খরচের প্রবণতা বেড়ে যায়। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন জগৎ এমনভাবে মায়াজাল তৈরি করে যে, কোনটা প্রয়োজন আর কোনটা কেবলই ইচ্ছে, সেই পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। সঙ্গীকে দোষারোপ না করে, তাঁর অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। হতে পারে, তিনি নিজেও এই অভ্যাসের কারণে অখুশি।

২। এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সঠিক সময় এবং স্থান নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। কাজের শেষে ক্লান্ত শরীরে বা কোনও কিছু নিয়ে মনখারাপের মুহূর্তে এই প্রসঙ্গ তুলবেন না। বরং ছুটির দিনে বা দু’জনে যখন শান্ত মনে একসঙ্গে আছেন, তখন কথা শুরু করুন। আলোচনার সুর যেন অভিযোগের মতো না শোনায়। ‘তুমি বড্ড বেশি খরচ করো’ বলার পরিবর্তে বলুন, ‘চলো না, আমরা দু’জনে মিলে আমাদের ভবিষ্যতের খরচপাতি নিয়ে একটা পরিকল্পনা করি’। ‘আমি’ বা ‘তুমি’-র বদলে ‘আমরা’ শব্দটি ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, আপনি সঙ্গীর প্রতিপক্ষ নন, আপনারা দু’জনে মিলে একটি নির্দিষ্ট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছেন।

৩। খরচে লাগাম টানার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল বাজেট তৈরি করা। দু’জনে একসঙ্গে বসে মাসের আয় এবং ব্যয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন। এর জন্য কোনও অ্যাপ বা ডিজিটাল স্প্রেডশিটের সাহায্য নিতে পারেন। বাড়ি ভাড়া, বিল, যাতায়াতের মতো অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলি আগে হিসাব করুন। এরপর আলোচনা করে ঠিক করুন, ভবিষ্যতের জন্য কতটা সঞ্চয় করবেন। বাকি টাকা থেকে দু’জনের ব্যক্তিগত খরচের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করুন। এই টাকা প্রত্যেকে নিজের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবেন, অন্যজন তাতে প্রশ্ন তুলবেন না।
আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

৪। একসঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করুন। যেমন, কয়েক বছর পর বিদেশে ঘুরতে যাওয়া, গাড়ি কেনা, সন্তানের উচ্চশিক্ষা বা অবসরের জন্য সঞ্চয়। যখন একটি নির্দিষ্ট ও আকর্ষণীয় লক্ষ্য চোখের সামনে থাকে, তখন অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতি মাসে কত টাকা সঞ্চয় করতে হবে, সেই হিসাব সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন, তিনিও এই যাত্রায় আপনার সঙ্গী হতে উৎসাহিত বোধ করছেন।

বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক করছেন, টাকার বিষয়টিকে অহং বা ক্ষমতার লড়াই হিসেবে দেখবেন না। এটি একটি বোঝাপড়ার বিষয়। মনে রাখা ভাল, যে কোনও অভ্যাস বদলাতে সময় লাগে। কিন্তু ধৈর্য এবং সহানুভূতির সঙ্গে একে অপরের পাশে থাকলে এই সমস্যাই হয়ে উঠতে পারে আপনাদের সম্পর্কের গভীরতা মাপার মাপকাঠি।