বলিউডে ‘পরদেশিয়া’ রিমিক্স মিউজিক ভিডিওতে রাখি সাওয়ান্তের সঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন কাশ্মীরি মডেল মুজাম্মিল ইব্রাহিম। সুঠাম চেহারা আর অন্যরকম লুকস তাঁকে রাতারাতি হার্টথ্রব করে তুলেছিল। সেই সাফল্যের জেরে বড়পর্দায় আসা—এ যেন স্বপ্নের মতো। কিন্তু বাস্তবটা হয়ে উঠেছিল দুঃস্বপ্ন।
২০০৭ সালে ভাট ক্যাম্পের ছবি 'ধোঁকা' দিয়ে বলিউডে ডেবিউ করেছিলেন তিনি। তবে আজ প্রায় দুই দশক পর, এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানালেন—সেই অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনে “ভয়াবহ” ছাপ রেখে গেছে। সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুজাম্মিল জানান—পরিচালক পূজা ভাট নাকি তাঁকে শ্যুটিং সেটে বারবার গালাগাল করেছেন। এমনকী তাঁর ব্যবহার ছিল এতটাই রূঢ় যে, অভিনেতার মনে হতো তাঁকে “কুকুরের মতো” ব্যবহার করা হচ্ছে। মুজাম্মিলের কথায়—“ওর মনোভাব ছিল—আমি বললে, বসবে। আমি যখন বলব, দাঁড়াও! দাঁড়াবে।”
তিনি আরও দাবি করেন—পূজা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে “উইমেন কার্ড” খেলেছিলেন, এবং শিল্পমহলে তাঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছিলেন।
শুটিং ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও মুজাম্মিল পারেননি। কাশ্মীর থেকে মুম্বইয়ে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন তিনি, সংসারের একমাত্র তিনিই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাই সব সহ্য করেও ছবিটি শেষ করতে হয়েছিল।
মুজাম্মিলের আরও দাবি, মহেশ ভাট জানতেন পূজার ব্যবহার ভুল, তবুও এড়িয়ে যেতেন। ভাট পরিবার নাকি বহিরাগত অভিনেতাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেওয়ার কৌশল নেয়। পাশাপাশি, পূজা ছিলেন পরিবারের “আদরের মেয়ে”, তাই তাঁর ভুল আচরণও গুরুত্ব পেত না।
‘ধোঁকা’র পর ভাট পরিবার তাঁকে ৩–৪টি প্রজেক্ট অফার করেছিল, যার মধ্যে ছিল সুপারহিট ফ্র্যাঞ্চাইজি রাজ ২। সোনি রাজদান ব্যক্তিগতভাবে মুজাম্মিলকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।মহেশ ভাটও চান তাঁকে ছবিতে রাখতে।কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার কারণে মুজাম্মিল সেই ছবিগুলো ফিরিয়ে দেন। এরপরই, মুজাম্মিলের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে নেতিবাচক খবর ছড়ানো হয়েছিল পরিকল্পনা করে। সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ানো হয়—“কাজ করা মুশকিল”, “অ্যাটিটিউড আছে”। এর জেরে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং প্রতিশ্রুতিময় কেরিয়ার থমকে যায়। “আসলে, তারা চায় সবাই তাদের চাটুকার হোক। আমি মাথা নোইনি, তাই আমাকে ভুগতে হয়েছে!” স্পষ্ট কথা মডেল-অভিনেতার।
মানসিক আঘাতের ছাপ আজও তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে, দাবি এই অভিনেতার। এই অভিজ্ঞতার জেরে— একাধিক বড় প্রজেক্ট থেকে দূরে সরে গিয়েছেন বলে জানানমুজাম্মিল, সাফল্য পাননি প্রত্যাশিত মাত্রায়, দীর্ঘদিন ভুগেছেন ইনসমনিয়া ও মানসিক চাপে। তাঁর কথায়—“এটা ছিল ভয়ঙ্কর নির্যাতন। ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আজও সেই দাগ রয়ে গেছে।”
বলিউডে ক্যাম্পবাজি, বহিরাগত বনাম ইন্ডাস্ট্রি পরিবার ইস্যু বহুবার সামনে এসেছে। কঙ্গনা রানাওয়াত থেকে শুরু করে সুশান্ত সিং রাজপুতের ঘটনা—সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাশালী পরিবারগুলির প্রভাব ও একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মুজাম্মিলের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি আবারও সেই বিতর্ককে সামনে নিয়ে এল।
তবে কিছু প্রশ্নও কিন্তু থেকে যায়—
মুজাম্মিলের অভিযোগ কতটা সত্যি?
ভাট পরিবার কি আসলেই তাঁর কেরিয়ার ধ্বংস করেছিল?
নাকি এটা এক তরুণ অভিনেতার ব্যর্থতার তিক্ত অভিজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ?
যা-ই হোক, এই সাক্ষাৎকার আবারও বলিউডের অন্দরে ক্ষমতার অন্ধকার দিককে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
