আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক সময়ের বন্ধু দেশ। গত কয়েকদিনে টানা শত্রুতা করে চলেছে, তেমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে মার্কিন মুলুক। মার্কিন মুলুকের সেই আক্রোশের শুল্কের মাত্রা বাড়ল আরও কিছুটা। বুধবার সন্ধেয় জানা গেল, ২৫ শতাংশের পর আরও ২৫ শতাংশ। মার্কিন মুলুক ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্কের হার দ্বিগুন করল। 

আন্তর্জাতিক এবং সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রাখার জন্য 'জরিমানা' হিসেবে ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছে মার্কিন মুলুক এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে মস্কোর যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেনাকাটাকারী এবং অর্থ সঙ্কটে থাকা অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধেও একই ধরণের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।

তবে বুধবারের এই ঘোষণা যে আসতে চলেছে, আভাস পাওয়া গিয়েছিল মঙ্গলবারেই। মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট একটি সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের উপর ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ শুল্ক আরোপ করতে পারি।”

ঠিক কী বলেছিলেন ট্রাম্প? বলেছিলেন, 'তিনি বলেন, “ভারত আমাদের সঙ্গে অনেক ব্যবসা করে, কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে অতো ব্যবসা করি না। তারা আমাদের ভাল বাণিজ্যিক অংশীদার নয়। আমরা ভারতের জন্য ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। কিন্তু আমার মনে হয় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি তা ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ বাড়িয়ে দেব।” সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, আগের আরোপিত শুল্ক কার্যকরী হয়ে যাবে ৭ আগস্ট থেকে, নতুন ২৫ শতাংশ আরোপিত শুল্ক তার ২১ দিন পর থেকে কার্যকরী হবে। 

 

ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্কের আরোপ ঠিক এক সপ্তাহ আগে করেছিল মার্কিন মুলুক। গত বুধবার দুপুরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে মার্কিন মুলুক। স্বাভাবিক ভাবেই, বন্ধু ট্রাম্পের আচমকা এহেন আচরণ কেন? প্রশ্ন উঠছিল তা নিয়ে। যদিও ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ঠিক কোন কারণে ভারতের উপর চড়া শুল্ক-হার চাপালেন তিনি। মাঝের দিনগুলিতে না নিয়ে নানা মন্তব্যও করেছেন তিনি। 

 

গত বুধবারেই ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর কারণ হিসেবে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ' তারা সবসময় রাশিয়া থেকে তাদের সামরিক সরঞ্জামের একটি বিশাল অংশ কিনেছে এবং চীনের সাথে রাশিয়ার শক্তির বৃহত্তম ক্রেতা, এমন এক সময়ে যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক তখন এসব কিছুই ভাল লাগছে না। তাই এবার থেকে ভারত ২৫% শুল্ক প্রদান করবে, এবং উপরোক্ত বিষয়ে জন্য একটি জরিমানাও দিতে হবে, যা পয়লা আগস্ট থেকে শুরু হবে।'

 

আরও পড়ুন: নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নতুন নথি দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, সাংসদে জানিয়ে দিল কেন্দ্র, কীভাবে মিলবে সেই কাগজ

 

মাঝেও বারে বারে রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। সোমবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছিলেন, “ভারত শুধু রাশিয়া থেকে তেলই কিনছে না, সেই তেল খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল টাকা লাভ করছে। রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনে কত মানুষের হত্যা হয়েছে সেই ব্যাপারে ভাবছে না একটুও। এই কারণে, ভারতের উপর করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বৃদ্ধি করব। বিষয়টি আমার নজরে আনার জন্য ধন্যবাদ।”

 

ট্রাম্পের শুল্কের হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছিল ভারত আগেই। এর পাশাপাশি, জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্র। একইসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানায়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতকে নিশানা করছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশ ভারতের নিন্দা করছে তারাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গিয়েছে। 

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ-র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো (৭৮.১ বিলিয়ন ডলার) এবং ২০২৩ সালে পরিষেবা বাণিজ্য ছিল ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো। এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ভারত বলেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ-র বাণিজ্য ভারতের মোট বাণিজ্যের চেয়ে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি’। ২০২৪ সালে ইইউ রেকর্ড পরিমাণ ১৬.৫ মিলিয়ন টন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনেছে রাশিয়ার থেকে। ২০২২ সালে এই পরিমাণ ছিল ১৫.২১ মিলিয়ন টন।

শুধু জ্বালানিই নয়, ইউরোপ এবং রাশিয়ার মধ্যে সার, খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক, লোহা, স্টিল, যন্ত্রপাতি এবং গাড়ির সরঞ্জামের বাণিজ্যও হয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকা তার পরমাণু শিল্পের জন্য রাশিয়া থেকে ইউরোনিয়াম হেক্সাফ্লুওরাইড কেনা বন্ধ করেনি। এর পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের জন্য প্যালাডিয়াম, সার এবং অন্যান্য রাসায়নিক আমদানি করাও অব্যাহত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৫.২ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১ সালে এটি প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। আমেরিকা রাশিয়ার উপর কোনও ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করেনি।

মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া বছরে নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা অতিমারি-পূর্ববর্তী ১০.১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের চেয়ে প্রায় ৫.৮ গুণ বেশি।