আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত কুড়ি বছর ধরে নিখোঁজ মেয়ে। জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই খোঁজ ছিল না মেয়ের। মা'ও দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে জানতেই পারেননি তাঁর মেয়ে আদৌ বেঁচে আছেন কিনা। কিন্তু মিরাকেল ঘটলো এবার। রাজ্যজুড়ে যখন এসআইআর নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে, তারই মধ্যে এদিন প্রায় কুড়ি বছর আগে হারানো মেয়েকে ফিরে পেলেন বৃদ্ধা। 

জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কোটার বাসিন্দা কল্যাণী অধিকারী। কুড়ি বছর আগে দত্তপুকুর পাটনা এলাকায় একমাত্র মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে মেয়ের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি। জানতেনও না, মেয়ে আদৌ বেঁচে আছে কি না। সেই মেয়ের সঙ্গেই সম্প্রতি মায়ের দেখা হল এসআইআরের সূত্র ধরে। কল্যাণী অধিকারীর বাড়ি বারাসাত এক নম্বর ব্লকের কোটরা অঞ্চলে। দমদমে থাকাকালীন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে চলে আসেন নিজের বাপের বাড়ি কোটরা এলাকায়। কোটরায় থাকাকালীন আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর মেয়ের সন্ধান পাননি তিনি। বিগত কয়েক বছর আগে সতীমাতা সর্বমঙ্গলা মঙ্গলাময়ী নকশারা তারা মায়ের মন্দিরে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই মায়ের কাছে প্রতিদিন পুজো দিতেন এবং আবদার করতেন যেন তাঁর সন্তানকে তিনি ফিরে পান।

বর্তমানে রাজ্যে এসআইআর নিয়ে চরম উত্তেজনা। এর মধ্যে কিছুদিন ধরে বেশ আতঙ্কে ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, ওই মন্দিরের পুরোহিত প্রতিষ্ঠাতা সপন সাধুকে সমস্ত বিষয় বিস্তারিত জানান কল্যাণী দেবী। পরে তাঁকে সেই পুরোহিত জানান তাঁর মেয়ে বেঁচে আছেন। এমনকী তিনি দেখাও পাবেন। স্বভাবতই এই কথা শোনার পরে মায়ের মন আকুল হয়ে ওঠে। আর এরপরই ঘটে যায় মিরাকেল। এনুমারেশন ফর্ম পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় নথি আনতে দমদমে গিয়েছিলেন মা কল্যাণী অধিকারী। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল জামাইয়ের। আর তারপর সহজেই মেয়ের কাছে পৌঁছে গেলেন কল্যাণীদেবী।

 প্রায় ২০ বছর পর মা-মেয়ের মিলন মুহূর্তে আবেগপ্রবণ অনেকেই। এলাকার লোকজন মজা করে বলছে ভাগ্যিস এসআইআর হচ্ছে। জানা গিয়েছে,  বিয়ের কিছুদিন পরই মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। পরবর্তীতে বহুবার দমদম-সহ সংলগ্ন এলাকায় মেয়ের খোঁজ করেছেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই মেয়ের খোঁজ পাননি বৃদ্ধা।এরপর হানা দেয় মহামারী করোনা। সেই দুঃসময়ে বৃদ্ধা কল্যাণীদেবী মন্দির থেকে প্রশাসনের দরজায় দরজায় পর্যন্ত ঘুরেছেন অনেক। 

এদিন মা কল্যাণী অধিকারী জানান, স্থানীয় বিএলও কল্যাণীদেবীর কাছে ২০০২ সালের নথি চান। এই কারণেই সম্প্রতি তিনি দমদমে যেখানে ভাড়া থাকতেন সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে রাস্তায় আচমকা জামাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তাঁর। জামাই নথি জোগাড় করে দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান কল্যাণীদেবীকে। তারপর অবশেষে বাড়ি গিয়ে মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। ২০ বছর পর মেয়েকে পেয়ে মা বলেন, "এতদিন বুক ফাঁকা ছিল। সন্তানকে পেয়ে শান্তি ফিরে পেলাম।"