আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে চিঠি লিখে ইতিমধ্যেই প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েছে দিল্লি পুলিশ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে সঙ্গীতশিল্পী রূপম ইসলাম, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনও এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তবে দিল্লি পুলিশের ওই চিঠির ঘটনায় এবার নতুন করে সাফাই গাইলেন বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য। মমতার এক্স হ্যান্ডেলের পোস্টের রিপ্লাইতে সোমবার সকালে একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলায় মমতা যেভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তা শুধু ভুল নয়, বরং বিপজ্জনকভাবে উস্কানিমূলক। চিঠিতে স্পষ্ট লেখা থাকা সত্ত্বেও তিনি এদিন দাবি করেন, দিল্লি পুলিশের চিঠিতে কোথাও বাংলা বা বাঙালি ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়নি।

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 4, 2025

তিনি ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘দিল্লি পুলিশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছে। এখানে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলতে তারা বোঝাতে চেয়েছে এমন একধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার থেকে অনেকটাই আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সরকারিভাষা শুধু ভিন্ন উচ্চারণেই নয়, বরং সেখানে এমন কিছু উপভাষা ব্যবহৃত হয়, যেমন সিলেটি, যা ভারতীয় বাঙালিদের কাছে কার্যত বোধগম্যই নয়’। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা বলে এমন কোনও একক ভাষা নেই যা সমস্ত ভিন্নতা ঢেকে দেয়। ‘বাঙালি’ মূলত শব্দটি জাতিগত পরিচয় বোঝায়, ভাষাগত ঐক্য নয়। সুতরাং দিল্লি পুলিশ যখন “বাংলাদেশি ভাষা” শব্দটি ব্যবহার করে, তখন সেটা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার জন্যই। বাংলা ভাষার ভারতীয় সংস্করণ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নয়’।

আরও পড়ুন: চিকিৎসক-সহ অন্যান্য বিভাগে স্থায়ী পদে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ, বড় ঘোষণা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোস্টে জাতীয় সঙ্গীত, বন্দেমাতরমের উল্লেখও করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে এদিন অমিত মালব্য লেখেন, ‘ধরা যাক আনন্দমঠ উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন বাংলায়, সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। বন্দে মাতরম গানটি রচিত হয়েছিল আলাদা ভাবে সংস্কৃতে এবং পরে উপন্যাসে যুক্ত হয়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত জন গণ মন মূলত ব্রাহ্ম ধর্মীয় স্তব হিসেবে রচিত হয়েছিল, যার ভাষা ছিল সংস্কৃতায়িত বাংলা’। উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর সেসব নথিগুলি বাংলা ভাষায় লেখা। দিল্লি পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে সেখানে লেখা হয়, ‘বাজেয়াপ্ত হওয়া নথিগুলি বাংলাদেশি ভাষায় লেখা এবং সেগুলি হিন্দি এবং ইংরাজিতে অনুবাদ করা দরকার। আমাদের এমন একজন অনুবাদক দরকার যিনি বাংলাদেশি ভাষায় দক্ষ’। আর চিঠির এই অংশকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

?ref_src=twsrc%5Etfw">August 3, 2025

সেটিই এক্স হ্যান্ডেলে চিঠিটি পোস্ট করে মমতা ব্যানার্জি লেখেন, ‘বাংলা, আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, সেই ভাষা যাতে আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় গান (যার রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) রচিত হয়েছে, কোটি কোটি ভারতীয় যাঁরা এই ভাষায় কথা বলেন ও লেখেন, এবং যে ভাষাকে ভারতের সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে — সেই ভাষাকে এখন ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হচ্ছে! দেশবিরোধী, অসাংবিধানিক, অপমানজনক! এটা সমস্ত ভারতীয় বাঙালির অপমান। এমন ভাষা ব্যবহার করে আমাদের সম্মানকে যে ভাবে হেয় করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অবিলম্বে এই বাংলাবিদ্বেষী কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর প্রতিবাদের দাবি করছি। যারা এভাবে সংবিধানবিরোধী ভাষা ব্যবহার করে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের অপমান ও হেয় করছে’।