আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির অভিযগে অনিল আম্বানির সংস্থার উপর তদন্ত চালাচ্ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) অনিল আম্বানি এবং তাঁর সংস্থা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস (আরকম)-কে ‘জালিয়াত’ ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) মুম্বইয়ে অনিল আম্বানির বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে হানা দেয়।
যদিও আম্বানির ব্যক্তিগত বাসভবনে অভিযান চালানো হয়নি, দিল্লি ও মুম্বই থেকে ইডি-র দলগুলি তাঁর বিভিন্ন গ্রুপ সংস্থার কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। এই তদন্ত মূলত রিলায়েন্স অনিল ধীরুভাই আম্বানি গ্রুপের (RAAGA) সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ ঘিরে।
ঠিক তার কয়েকদিনের মাথায়, অনিল আম্বানিকে তলব করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সর্বভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর তেমনটাই। জানা গিয়েছে, বিপুল অঙ্কের আর্থিক তছরুপ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি মামলার তদন্তে তলব করা হয়েছে অনিল আম্বানিকে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ৩,০০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক তছরুপ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ আগস্ট রিলায়েন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান অনিল আম্বানিকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তলব করেছে।
এর আগে, মুম্বই ও দিল্লিতে অবস্থিত অনিল ধীরুভাই আম্বানি-নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানে টানা তিন দিন ধরে তল্লাশি চালিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন (PMLA)-এর আওতায় এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ওই আইনের আওতায় দিল্লি এবং মুম্বইয়ে তিনদিন ধরে ৫০টি সংস্থা এবং ২৫ জন ব্যক্তির, যার মধ্যে অনিল আম্বানি গ্রুপের সংস্থাগুলির বেশ কয়েকজন নির্বাহীও রয়েছেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সূত্র অনুযায়ী, ৩,০০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলায় রিলায়েন্স গ্রুপ ও ইয়েস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
তিনদিনের তল্লাশি, তদন্তে উঠে এসেছে যে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে রিলায়েন্স হোম ফিনান্স ও সংশ্লিষ্ট গ্রুপ কোম্পানিগুলিকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার আগে ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রোমোটারদের বিভিন্ন ‘কনসার্নে’ টাকা ঢুকেছে। অর্থাৎ, ‘ঘুষ’ ও ঋণ অনুমোদনের মধ্যে এক যোগসূত্র খতিয়ে দেখছে ইডি।

তদন্তে আরও দাবি করা হয়েছে, ঋণের অনুমোদনে ব্যাঙ্কের নীতির ‘মারাত্মক লঙ্ঘন’ হয়েছে। বিনা ডিউ ডিলিজেন্স বা ঋণ বিশ্লেষণ ছাড়াই ‘ব্যাক-ডেটেড’ (পুরনো তারিখে তৈরি করা) অনুমোদনপত্রের ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এই ঋণের অর্থ বহু গ্রুপ কোম্পানি ও তথাকথিত ‘শেল কোম্পানিগুলিতে’ স্থানান্তর করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই মানি লন্ডারিং কেসটি অন্তত দুটি সিবিআই এফআইআর, এবং ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ক, সেবি, ন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং অথরিটি (NFRA) ও ব্যাঙ্ক অফ বরোদা-র রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এসব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি সুপরিকল্পিত স্কিমের মাধ্যমে পাবলিক মানি জালিয়াতি করে ব্যাঙ্ক, বিনিয়োগকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের প্রতারিত করা হয়েছে।
এদিকে, কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছে যে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) আরকম (RCOM)-কে ‘প্রতারক’ হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করেছে এবং সিবিআই-এর কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আরও জানা গিয়েছে, কানাড়া ব্যাঙ্ক ও আরকম-এর মধ্যে ১,০৫০ কোটির ঋণ প্রতারণা নিয়েও ইডি-র তদন্ত চলছে। এছাড়াও, অনিল আম্বানির ‘অঘোষিত’ বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং বিদেশে অবস্থিত সম্পদ সম্পর্কেও খোঁজ নিচ্ছে সংস্থাটি। এসবের মাঝেই তলব করা হল অনিল আম্বানিকে।
