আজকাল ওয়েবডেস্ক: ময়ূরের পালক তার উজ্জ্বল ও রঙিন সৌন্দর্যের জন্য বহুদিন ধরেই বিখ্যাত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, এই পালক শুধু চোখধাঁধানো রংই দেখায় না—সঠিক পরিস্থিতিতে এটি লেজার আলোও নির্গত করতে পারে। গবেষকদের মতে, একটি সাধারণ রঞ্জক পদার্থে ভিজিয়ে সবুজ আলোর পালস প্রয়োগ করলে ময়ূরের পালক থেকে প্রকৃত লেজার আলো তৈরি হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৭৪ ও ৫৮৩ ন্যানোমিটারে দুটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম রেখা তৈরি হয় যা সাধারণ আলো বিকিরণের নয় বরং সত্যিকারের ‘লেজিং’-এর স্পষ্ট প্রমাণ। এই পরীক্ষায় গবেষকরা ময়ূরের পালক বারবার রোডামিন ৬জি নামের একটি সাধারণ ডাই দিয়ে ভিজিয়ে শুকিয়েছেন। এরপর ৫৩২ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সবুজ আলো দিয়ে পালকটিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাতেই এই অভিনব ফলাফল পাওয়া যায়।
সবচেয়ে শক্তিশালী লেজার সংকেত পাওয়া গেছে পালকের চোখের মতো নকশার সবুজ অংশে, যাকে ‘আইস্পট’ বলা হয়। তবে একই দুটি লেজার রেখা হলুদ ও বাদামি অংশেও ধরা পড়েছে। ফ্লোরিডা পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির গবেষক নাথান জে. ডসন বলেন, আমি সবসময় মনে করি, মানুষের উপকারে আসা অনেক প্রযুক্তিই প্রকৃতিতে কোথাও না কোথাও বিবর্তনের মাধ্যমে আগেই তৈরি হয়ে আছে।
এই গবেষণা দেখাচ্ছে, জটিল জৈব উপাদানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ক্ষুদ্র ও সুশৃঙ্খল গঠন বিশ্লেষণের এক নতুন পথ খুলে যাচ্ছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন আলো উৎস তৈরির সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে, যা জীবন্ত টিস্যুর সঙ্গে নিরাপদভাবে কাজ করতে পারবে—বিশেষ করে সেন্সিং ও ইমেজিংয়ের ক্ষেত্রে।
‘বায়োলেজার’ বলতে এমন লেজারকে বোঝানো হয়, যেখানে যন্ত্রের কোনও অংশে জৈব উপাদান ব্যবহার করা হয়। যদিও এর জন্যও প্রয়োজন গেইন মেটেরিয়াল, ফিডব্যাক কাঠামো এবং নির্দিষ্ট মাত্রার শক্তি। এই পরীক্ষায় গেইনের কাজ করেছে রোডামিন ৬জি ডাই, আর ফিডব্যাক এসেছে পালকের ভেতরের অতি ক্ষুদ্র কাঠামো থেকে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ময়ূরের পালকের রং কেবল রঞ্জকের কারণে নয়। প্রতিটি ক্ষুদ্র ‘বারবিউল’-এর মধ্যে কেরাটিনের ভিতরে থাকা মেলানিন রডের ফোটোনিক ক্রিস্টাল নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত করে এই উজ্জ্বল রং তৈরি করে। এই ন্যানো কাঠামো বহু পাখির মধ্যেই দেখা যায় এবং বিবর্তনের ইতিহাসে ভালোভাবেই নথিভুক্ত।
তবে নতুন এই লেজার বৈশিষ্ট্য পেতে শুধু প্রাকৃতিক কাঠামোই যথেষ্ট ছিল না। গবেষকরা সাজসজ্জার কাজে ব্যবহৃত ময়ূরের পালক কেটে নিয়ে আইস্পট অংশটি একটি ভিত্তির উপর বসান। এরপর জল ও ইথানলের মিশ্রণে রোডামিন ৬জি দিয়ে একাধিকবার ভিজিয়ে শুকানোর প্রক্রিয়া চালানো হয়। শেষ পর্যায়ে, পালকটি ভেজা অবস্থায় সবুজ আলোর পালস দেওয়া হলে তীক্ষ্ণ লেজার রেখা ধরা পড়ে। একবার ডাই লাগালেই এই ফল পাওয়া যায়নি—বারবার ভেজানো ও শুকানোর পরই এই বিস্ময়কর লেজার প্রভাব দেখা দিয়েছে।
