আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আরাবল্লি পর্বতমালায় নতুন খনি ইজারা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে রাজস্থান সরকারের বিরুদ্ধে। পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলির দাবি, এটি শুধু আদালত অবমাননাই নয়, বরং দেশের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে এক গভীর অপরাধ।
গত ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র সরকারকে নির্দেশ দেয়, আরাবল্লি অঞ্চলে আর কোনও নতুন খনি ইজারা দেওয়া যাবে না। এই নির্দেশের ভিত্তিতেই ২৪ ডিসেম্বর কেন্দ্র সরকার রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি ও গুজরাট এই চার রাজ্যকে একই আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ পাঠায়। কিন্তু অভিযোগ, এই আদালতের নির্দেশ কার্যত উপেক্ষা করেই রাজস্থান সরকার নতুন করে খনি ইজারা দিয়েছে।
‘আরাবলি হেরিটেজ পিপলস ক্যাম্পেইন’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজস্থান সরকার একদিকে যখন নতুন খনি নিষিদ্ধ করার সরকারি নির্দেশ ব্যাপকভাবে প্রচার করছিল, ঠিক সেই সময়েই ২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আরাবল্লি অঞ্চলে গোপনে মোট ৫০টি নতুন খনির ইজারা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আলওয়ারে ২০টি, কোটপুটলিতে ৭টি, জয়পুর ও ভিলওয়ারায় ৬টি করে, সিরোহিতে ৫টি, তিজারা ও রাজসমন্দে ২টি করে এবং দৌসা ও ঝুনঝুনুতে একটি করে খনির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনও জনঘোষণা, পরিবেশগত মূল্যায়ন বা স্বচ্ছতার চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।
পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট আরও একটি নির্দেশে জানায়, খনন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনও ধরনের খনি ইজারা দেওয়া যাবে না। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি, সেই নির্দেশের পরেও নতুন ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি।
পরিবেশবাদীদের আরও অভিযোগ, ২০ নভেম্বরের রায়ে আরাবল্লিকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে স্থানীয় ভূমি থেকে ১০০ মিটার বা তার বেশি উঁচু ভূমি হিসেবে, তা ব্যবহার করে আরাবল্লির বিস্তীর্ণ ঢাল ও সংলগ্ন জমিকে পাহাড়ের সংজ্ঞার বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে পাহাড়ের পরিচয় বদলে দিয়ে ধীরে ধীরে সেই জমি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রবীণ পরিবেশকর্মীরা দাবি করেছেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টে সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি এবং ১৯৯০ সালের পর থেকে আরাবল্লি রক্ষার পক্ষে দেওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ রায় ইচ্ছাকৃতভাবে পেশ করেনি। আশ্চর্যের বিষয়, এই মামলায় আদালত আরাবল্লি রক্ষার আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনকেই শুনানির জন্য ডাকেনি।
একজন প্রবীণ কর্মী বলেন, “আমি ১৯৮০ সাল থেকে আরাবল্লি রক্ষার কাজে যুক্ত। খনি বন্ধ করা, কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া, চারণভূমি পুনরুদ্ধার, এই লড়াইয়ের ফলেই আজ আরাবল্লি টিকে আছে। অথচ আমাদের কাউকেই আদালত ডাকেনি।”
আন্দোলনকারীদের মতে, নতুন নীতির আড়ালে আদিবাসী, কৃষক ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জমি কেড়ে নিয়ে সেখানে খনি, বিলাসবহুল পর্যটন প্রকল্প, সাফারি ও নতুন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় সরকার ও কিছু বড় শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘আরাবলি হেরিটেজ পিপলস ক্যাম্পেইন’ নতুন করে একটি জনআন্দোলনের ডাক দিয়েছে। শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে আরাবল্লি পর্বতমালার বিস্তৃত যাত্রা ও পরিক্রমা, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরাবলি সিংহনাদ’। এই যাত্রার উদ্দেশ্য হবে মাটিতে নেমে আরাবল্লির ধ্বংসের বাস্তব চিত্র নথিভুক্ত করা, জনগণ, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা এবং আরাবল্লিকে খনি-মুক্ত ও সবুজ অঞ্চল হিসেবে রক্ষা করা।
সংগঠকদের মতে, এই যাত্রায় ভূতত্ত্ববিদ, রাজস্ব নথি বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় মানুষ, সংবাদমাধ্যম, ছাত্র-শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করা হবে। স্থানীয় মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণই এই আন্দোলনের মূল শক্তি হবে।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য স্পষ্ট, আরাবল্লির জমি আরাবল্লিরই থাকতে হবে। সময় এখনও পুরোপুরি ফুরিয়ে যায়নি। কৃষকরা প্রস্তুত, সংবাদমাধ্যম আগ্রহী। এখন প্রয়োজন মানুষের কণ্ঠ, চিন্তা ও কর্মকে একত্রিত করা।
