আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডায়াবেটিসের সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। কিন্তু আজও রোগটি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব রয়েছে সমাজে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে প্রথমেই মাথায় আসে, অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া কিংবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়েট-এর কথা। তবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অনেক দৈনন্দিন অভ্যাস রয়েছে যা সরাসরি খাওয়ার সঙ্গে যুক্ত না হলেও আচমকাই রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলি আরও সতর্কভাবে নজরে রাখা দরকার।
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: চাপ, উদ্বেগ বা মানসিক টেনশন এই তিনটি শব্দ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা চাপের মধ্যে থাকি, তখন শরীর থেকে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলি শরীরকে উত্তেজিত করে, ফলে যকৃত থেকে গ্লুকোজ নিঃসরণ বেড়ে যায়, যাতে শরীর দ্রুত এনার্জি পায়। কিন্তু দীর্ঘদিন এই চাপ চললে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: শুক্রাণু দান করে কত টাকা আয় হয়? ভারতে বীর্য দাতা হতে গেলে কোন কোন নিয়ম জানতে হবে?
২. ঘুমের অভাব ও অনিদ্রা: ঘুম কম হলে দেহের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যায়। শরীর তখন ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না, ফলে রক্তে গ্লুকোজ জমে যেতে থাকে। যাঁরা প্রতিদিন ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেশি।
৩. সংক্রমণ বা ইনফেকশন: শরীরে সর্দি, কাশি বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো কোনও ইনফেকশন হলে কর্টিসল ও অন্যান্য স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এদের প্রভাবে রক্তে শর্করা বাড়ে। অনেক সময় খবর একই রকম খেলেও ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে জ্বর বা সংক্রমণের সময় হঠাৎ সুগার বেড়ে যায়। এই কারণেই সেটি হয়।
আরও পড়ুন: ৮৫ বছর বয়সে মাধ্যমিকে বসেও ফের অকৃতকার্য! ইনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক স্কুলছাত্র
৪. কিছু ওষুধ: স্টেরয়েড (যেমন- প্রেডনিসোলন), কিছু অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যার ফলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনি ডায়াবেটিক হন।
৫. শরীরচর্চা না করা বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: শরীরচর্চা করলে রক্তের গ্লুকোজ পেশিগুলিতে শোষিত হয়। কিন্তু যাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থাকেন (বিশেষত অফিস কর্মীরা), তাঁদের শরীরে ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে খাবার ঠিকঠাক হজম হলেও রক্তে গ্লুকোজ জমতে শুরু করে।
৬. ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল: ধূমপান ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়। অন্যদিকে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ প্রথমে রক্তে সুগার কমিয়ে দিলেও, পরে হঠাৎ করে তা অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে।
সব মিলিয়ে কেবল খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলেই ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। খাদ্যাভ্যাসের বাইরেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, ঘুম, মানসিক অবস্থা, ওষুধপত্র এবং শরীরচর্চা, এইসব কিছুরই প্রভাব পড়ে গ্লুকোজের মাত্রার উপর। তাই সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে শুধুমাত্র খাদ্য নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুশৃঙ্খল জীবনধারাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ওষুধ।
