অনেক বাবা-মা-ই মনে করেন, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। দু’একদিন মল ত্যাগ না করলে তা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, এই ধারণাই দেখা যায় অভিভাবকদের মধ্যে। কিন্তু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য অবহেলা করা উচিত নয়। দীর্ঘদিন এই সমস্যা চললে তা শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। 

চিকিৎসকদের মতে, আজকাল শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ছে মূলত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের কারণে। খাবারে ফাইবার কম থাকায় হজমের সমস্যা হয়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল না খাওয়া ও খেলাধুলা কমে যাওয়াও বড় কারণ। সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখলে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া জরুরি। 

খাবার কম খাওয়াঃ অনেক সময় দেখা যায়, শিশু ঠিকমতো খেতে চায় না। বাবা-মা ভাবেন, হয়তো জেদ করছে। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও শিশুর খিদে কমে যেতে পারে।
পেট ব্যথা বা পেট ফাঁপাঃ বারবার পেট ব্যথার অভিযোগ, বিশেষ করে খাওয়ার পর, কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর পেট ফাঁপা বা শক্ত হয়ে যায়।

মলত্যাগে কষ্ট বা ব্যথাঃ শিশু যদি টয়লেটে যেতে ভয় পায়, কাঁদে বা অনেকক্ষণ বসে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে মল শক্ত হয়ে গিয়েছে। ব্যথা লাগার ভয়েই অনেক শিশু মল ত্যাগ করতে চায় না। 

মল ধরে রাখার অভ্যাসঃ দাঁড়িয়ে পা জোড়া করা, শরীর শক্ত করে রাখা, টয়লেট এড়িয়ে যাওয়া-এসব আচরণ আসলে মলত্যাগ এড়ানোর চেষ্টা।

দীর্ঘদিন মল না হওয়াঃ প্রতিদিন মল না হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য নয় ঠিকই, কিন্তু যদি ৩-৪ দিন অন্তর খুব শক্ত মল হয়, তাহলে তা চিন্তার বিষয়।

কেন অবহেলা করা বিপজ্জনক? দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য চললে শিশুর অর্শ, ফিশার, পেটে সংক্রমণ, এমনকী মনের উপরও খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। শিশুর খিটখিটে মেজাজ, পড়াশোনায় মন না বসা-সবই এর ফল হতে পারে।
সেক্ষেত্রে যদি সমস্যা দুই সপ্তাহের বেশি সমস্যা থাকে, মলের সঙ্গে রক্ত দেখা যায়, ওজন কমতে থাকে, তীব্র পেট ব্যথা বা জ্বর হয় তাহলে দেরি না করে শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যকে কখনওই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সময়মতো লক্ষণ বুঝে খাদ্যাভ্যাসে ফাইবার বাড়ানো, জল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ও নিয়মিত টয়লেটে যাওয়ার রুটিন তৈরি করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আসে। বাবা-মায়ের সচেতনতাই এখানে সবচেয়ে বড় ওষুধ।

&t=82s