আজকাল ওয়েবডেস্ক: মদ্যপান নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের দাবি করে দায়ের হওয়া একটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এআইএডিএমকে-র প্রাক্তন বিধায়ক এ শ্রীধরন দায়ের করেছিলেন এই মামলা, যেখানে তিনি তামিলনাড়ু স্টেট মার্কেটিং কর্পোরেশন লিমিটেড (TASMAC)-এর অধীনে থাকা মদের দোকানের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার এবং পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ মদ নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা বিবেচনা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এছাড়াও, তাঁর দাবি ছিল, প্রতিটি মদের বোতলের গায়ে কতটা পরিমাণ মদ খাওয়া নিরাপদ তা উল্লেখ করে দেওয়া হোক। তাঁর বক্তব্য, অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে রাজ্যে গার্হস্থ্য হিংসা, বন্ধ্যাত্ব এবং কম বয়সে মৃত্যুর মতো সমস্যার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। এসব বিষয়ে সরকারকে সমীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়ার আবেদনও জানান তিনি।

বুধবার মামলাটি মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এমএম শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি সুন্দর মোহনের ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। শুনানিতে তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই মদের বোতলে উল্লেখ থাকে যে মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি, এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এর উত্তরে বিচারপতিরা পর্যবেক্ষণ দেন, "মদের বোতলে লেখা থাকে 'মদ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর'। এখন কতটা পরিমাণে মদ খাওয়া উচিত তা আদালত নির্ধারণ করতে পারে না। বোতলে এই মাত্রাও লেখা সম্ভব নয়।" তাঁরা আরও বলেন, "এটি একান্তই ব্যক্তিগত পছন্দ এবং সিদ্ধান্তের বিষয়, আদালত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।"

মদের দোকানের সংখ্যা কমানোর প্রসঙ্গে আদালতের মন্তব্য, "এটি একান্তভাবেই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। আদালত সেই বিষয়ে কোনও পৃথক নির্দেশ দিতে পারে না।" এই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত। উল্লেখ্য, TASMAC হল তামিলনাড়ু সরকারের অধীনে পরিচালিত সংস্থা, যারা রাজ্যে মদের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। ভারতে উৎপাদিত বিদেশী মদের (IMFL) বিপণনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। এই সংস্থার মাধ্যমেই রাজ্য সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করে, যা মদ নিষিদ্ধের প্রশ্নে প্রশাসনকে দ্বিধার মধ্যে ফেলে দেয় বলে মনে করেন অনেক পর্যবেক্ষক।

আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত ভিডিও কাণ্ডে শোরগোল, লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করলেন দিলীপ ঘোষ

তবে মামলাটি আদালতে খারিজ হওয়া সত্ত্বেও তামিলনাড়ুতে মদের উপর জনস্বার্থ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিতর্ক যে অব্যাহত থাকবে, তা বলাই যায়। মদ্যপান একটি সামাজিক এবং জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বিশেষ করে যখন তা অতিরিক্ত মাত্রায় হয়। অল্প পরিমাণে মদ্যপান কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক বা পারিবারিক পরিসরে স্বীকৃত হলেও, নিয়মিত ও মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন যকৃতের সিরোসিস, হাই ব্লাড প্রেশার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্যানক্রিয়াটাইটিস এবং ক্যানসারের সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও মদের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। বিষণ্নতা, উদ্বেগ, আত্মহত্যাপ্রবণতা ইত্যাদি মানসিক সমস্যা মদ্যপানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উপরন্তু, অতিরিক্ত মদ্যপান পারিবারিক সহিংসতা, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মস্থলে অস্থিরতা এবং আর্থিক সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষত তরুণ সমাজের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যের জন্য চিন্তার বিষয়। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চমাত্রার অ্যালকোহল সেবন বন্ধ্যাত্ব এবং জন্মগত ত্রুটির আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শুধু সচেতনতা নয়, বরং সরকার ও সমাজের পক্ষ থেকে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন। মদ্যপানের সহজলভ্যতা ও বিপণন যতদিন সীমিত না হবে, ততদিন এই সমস্যা নির্মূল করা কঠিন।