কৌশিক রায়: কলকাতা লিগের ডার্বি জয়ের পর ইস্টবেঙ্গলের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে স্কোরলাইন পোস্ট করা হয়েছে নিয়ম মেনেই। কিন্তু চমক রয়েছে পোস্টের ক্যাপশনে। সেখানে লেখা: '২৬ জুলাই, রিমেম্বার দ্য ডেট'।
আজকের দিনেই ২০০৩ সালে আশিয়ান কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ডার্বি জিতে সেই স্মৃতিতে ডুব দিলেন লাল-হলুদ কোচ বিনো জর্জও। সাংবাদিকদের কাউকে প্রশ্নও করতে হয়নি। নিজেই সবাইকে থামিয়ে বললেন, '' আপনাদের একটা কথা জানিয়ে রাখি, এই দিনটা ইস্টবেঙ্গলের কাছে একটা বিশেষ দিন। এই দিনেই আশিয়ান জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ম্যানেজমেন্ট থেকে আমায় বলেছিল, এইদিনে হারা চলবে না। আমার ছেলেরা ম্যাচ জিতে ফিরেছে, আমি খুশি।''
আরও পড়ুন: কল্যাণীর রং লাল-হলুদ, অনবদ্য সায়ন, মরশুমের প্রথম ডার্বিতে বাগানকে ধরাশায়ী করে ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের
খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই এদিন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি। ফুটবলাররাও সেলিব্রেশনে মাতেন সমর্থকদের সঙ্গে। আর বিনু জর্জ? শেষের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ডাগ আউট ছেড়ে হাঁটা লাগালেন। বাইরের আনন্দ, উৎসব তাঁকে যেন স্পর্শও করছে না। সেই মানুষটাই কিন্তু যুদ্ধ জিতে উঠে অন্যরকম।
বিনো জর্জ বলেন, 'অনেক জায়গায় ফুটবল খেলেছি, কোচিংও করিয়েছি, বাংলার ফুটবলের মতো পরিবেশ কোথাও দেখিনি। এই জয় আমার দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। মোহনবাগানও ভাল খেলেছে। আমার ছেলেরা প্রত্যেকে পরিকল্পনামাফিক ফুটবল খেলেছে, দলের খেলায় আমি খুশি।''
এদিন কল্যাণীর মাঠ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন বাগান কোচ ডেগি কার্ডাজো। সেই প্রসঙ্গে বিনো জানান, ''মাঠ যেমনই হোক না কেন আমরা সেটা মেনে নিয়েই খেলেছি। কাদা ছিল, মাটি নরম ছিল, পা ঢুকে যাচ্ছিল খেলোয়াড়দের। আমাদের জেসিন টিকে চোট পেয়েছে, সায়নও চোট পেয়েছে। সেটা কতটা গুরুতর, কতদিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে সেটা চিকিৎসকরা দেখার পর বলবেন। তবে ম্যাচের ফলাফলটাই আসল আমার কাছে।''
এই বিনোই ম্যাচের আগেরদিন বলছিলেন, ''ডার্বি একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধ আমি জিততে চাই।'' যুদ্ধ জিতলেন বিনো। ইস্টবেঙ্গলও জমি ফিরে পেল কলকাতা লিগে। মোহনবাগানের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। এই জয় ছড়িয়ে দিচ্ছে অক্সিজেন। এগিয়ে যাওয়ার অক্সিজেন।
ইস্টবেঙ্গলের সিনিয়র ফুটবলারদের সংখ্যা নিয়েও এদিন মুখ খুলেছিলেন মোহনবাগান কোচ ডেগি। জবাবে বিনো বলেন, ''আমাদের মার্তন্ড আই লিগ থেকে উঠে এসেছে। রামসাঙ্গা রিয়েল কাশ্মীরে খেলেছে। ওদের আইএসএল খেলা ফুটবলার রয়েছে দলে। আমাদের ডেভিড আইএসএলে ক'টা সুযোগ পেয়েছে? লাকরা ক'টা সুযোগ পেয়েছে?''
কলকাতা লিগের ডার্বিতে নিজের প্রথম গোল বাবা- মাকে উৎসর্গ করলেন সায়ন। জানালেন, ''একটা খারাপ সময় যাচ্ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠেছি। এই ম্যাচ আগামিদিনে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। চেষ্টা করব পরবর্তী ম্যাচগুলোতে আরও ভাল খেলার।''
প্রসঙ্গত, কলকাতা লিগে গত কয়েক ম্যাচে হারের পরেও এদিন দুর্দান্ত ভাবে কামব্যাক করল ইস্টবেঙ্গল। কল্যাণীতে মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচে মোহনবাগানকে নিয়ে একপ্রকার ছেলেখেলা করলেন সায়ন, আমনরা।
ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-২। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করলেন জেসিন টিকে, সায়ন ব্যানার্জি এবং ডেভিড লালনসঙ্গা। তবে ৯০ মিনিট জুড়ে একাধিকবার মোহনবাগানের ডিফেন্স চুরমার করে দিয়েও গোলের সংখ্যা মাত্র ৩টে। আরও কয়েকটা গোল হতেই পারত। ম্যাচের সেরা হলেন সায়ন ব্যানার্জি। এহেন সায়নকেই আইএসএল ডার্বিতে ধাক্কা েরে ফেলে দিয়েছিলেন পেত্রাতোস। মোহনবাগানকে দেখলেই কি জ্বলে ওঠেন সায়ন? হাতে ইলিশ নিয়ে সায়ন ব্যানার্জি কেবল হাসছেন। এই হাসির যে আবার অনেক অর্থ হয়।
গতবারের কলকাতা লিগে ডার্বির চেয়ে এবারের ম্যাচ অনেক জমজমাট। দুর্দান্ত পরিবেশ ছিল কলকাতা ডার্বির জন্য। দশ হাজারের স্টেডিয়াম একেবারে কানায় কানায় ভর্তি। পর্যাপ্ত পুলিশ প্রহরা থেকে শুরু করে দুই দলের আলাদা আলাদা ব্লক, আলাদা আলাদা নামে গ্যালারি সব মিলিয়ে বড় ম্যাচ আয়োজনে পাশ করে গেল কল্যাণী।
