কৃশানু মজুমদার: ২৬ জুলাই। গর্বের দিন ইস্টবেঙ্গলের। ২২ বছর আগে আজকের দিনেই বেক তেরো সাসানাকে হারিয়ে আশিয়ান কাপ জিতেছিল লাল-হলুদ। আজ শনিবার। আজ আরও একটা ২৬ জুলাই। কল্যাণীতে মোহনবাগানকে হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের শেষে বিনু জর্জের ইস্টবেঙ্গল হারাল ৩-২ গোলে। 

প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়েছিল লাল-হলুদ। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর পরে মোহনবাগান প্রবল ভাবে ফিরে আসে ম্যাচে। ২-০ থেকে ২-২ হয়ে যায়। তার পরই ডেভিডের ম্যাজিকইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যায় ৩-২ গোলে। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি মোহনবাগান

২২ বছর আগে লাল-হলুদ রূপকথার দিন মাঠে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের সহ সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। কলকাতা ময়দানে তিনি 'ডাক্তারবাবু' বলেই পরিচিত।

কলকাতা ডার্বিতে মশাল জ্বলে উঠতেই উত্তেজিত ভাবে তিনি বলে উঠলেন, ''দিন মাহাত্ম্য বলে তো একটা কথা আছে। ইস্টবেঙ্গল ২৬ জুলাই হারে না'' ইস্টবেঙ্গলের গরবে গরিয়ান শান্তিবাবু। ইস্টবেঙ্গলের বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী তিনি।  

আরও পড়ুন: কল্যাণীর রং লাল-হলুদ, অনবদ্য সায়ন, মরশুমের প্রথম ডার্বিতে বাগানকে ধরাশায়ী করে ম্যাচ ইস্টবেঙ্গলের

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের আগে লাল-হলুদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ষষ্ঠী দুলের সেই অমর মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছিলম্যাচ চলাকালীন বেক তেরো সাসানার সুপারস্টার চাইম্যানকে লাল-হলুদের ষষ্ঠী বলেছিলেন, ''ইউ চাইম্যান। আই ষষ্ঠী দুলে'' এহেন ষষ্ঠী দুলেই আবার মাঠে নামার আগে তৎকালীন কোচ সুভাষ ভৌমিককে বলেছিলেন, ''ভাত এনে দাও। চাইম্যানকে রুখে দেব'' বাকিটা ইতিহাস। আজ আশিয়ান জয়ের বর্ষপূর্তি। লাল-হলুদ সমর্থকদের রক্তের গতি প্রবল। এই প্রজন্মের লাল-হলুদ ফুটবলারদেরও উত্তেজিত করে ভাইচুংদের ইতিহাস গড়া। 

শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত সেই প্রসঙ্গ উত্থাপ্পন করে বলছেন, ''২৬ জুলাই পয়মন্ত দিন। কলকাতা লিগে ডার্বিতে নামার আগে ইস্টবেঙ্গল পয়েন্টের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। এই অবস্থায় খেলতে নেমে ছেলেরা জয় ছিনিয়ে নিল। এরপর তো বলতেই হবে ২৬ জুলাই ইস্টবেঙ্গল হারে না। ওরা নতুন দিনের আলো ছড়িয়ে দিল কল্যাণীতে। আইএসএলে মোহনবাগানের কাছে টানা হার। সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আজ সায়ন, ডেভিড, জেসিন, দেবজিৎরা নতুন বার্তা হয়তো দিয়ে গেল সিনিয়র দলকে। আমরা পারলে তোমরা পারবে না কেন?''

এদিন সকালেই ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ব্রাজিলীয় তারকা ডগলাস দ্য সিলভা ফেসবুকে আশিয়ান জয় নিয়ে পোস্ট করেছিলেন। তিনি অভিমানী। সেদিনের নায়করা সবাই আজ নস্ট্যালজিকশান্তিবাবুও তো টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন ফেলে আসা দিনে। কল্যাণীতে শেষ বাঁশি বাজার পরে তৃপ্তি নিয়ে তিনি বলছেন, ''সুলে মুশার পিঠে চোট ছিল। হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছিল। মুসা কোথা থেকে যেন শুনেছিল অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি ওষুধ একসঙ্গে খেলে কাজ করে না। আমি বলেছিলাম, তোমাকে তো ওষুধ খেতে দিচ্ছি না। ব্যথা কমার ইঞ্জিকেশন দেব। আর একটা বেল্ট পরতে দিয়েছিলামমুশা যোদ্ধা। লড়ে গিয়েছিল শেষপর্যন্ত''

মাইক ওকোরোর কাঁধের লিগামেন্টেও চোট ছিল। ফাইনালের দিন বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওকোরোকে নামানো হয়শান্তিবাবু বলছিলেন, ''অসহ্য যন্ত্রণা ছিল ওকোরোর। আমি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম লিগামেন্টে চোট। কিন্তু ওকে সাহস জুগিয়ে বললাম, এই দেখো ইঞ্জকেশন দিলাম। কোনও ভয় নেই। ওকোরোই তো বেক তেরো সাসানাকে প্রথম ধাক্কাটা দিল''

পড়ে যেতে যেতে বাঁ পায়ে গোল করছেন ভাইচুং, ডান পায়ে অ্যালভিটোর গোল। শান্তিবাবুর চোখে ভেসে ওঠে সোনালী অতীত। আবেগের বাষ্প গলায় জড়িয়ে বর্ষীয়ান ইস্টবেঙ্গল কর্তা বলেন, ''কল্যাণীতে মোহনবাগানকে হারিয়ে ছেলেরা আশিয়ান জয়কেই যেন সেলিব্রেট করল'' কল্যাণী আর জাকার্তা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। 

আরও পড়ুন:  পন্থের চোটের পর ক্রিকেটে এই নিয়ম আনতে চলেছে আইসিসি