আজকাল ওয়েবডেস্ক: দ্বিতীয় দিনের মতো সীমান্তে উত্তপ্ত সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে থাইল্যান্ড ও ক্যাম্বোডিয়া। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সংঘর্ষে দুই দেশের মিলিয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, প্রায় ৮০,০০০ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপদ আশ্রয়ে। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত দুই দিনে তাদের ছয়জন সৈনিক নিহত হয়েছেন। থাই সরকারি হিসেব অনুযায়ী মোট ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। অপরদিকে, ক্যাম্বোডিয়ার একটি প্রাদেশিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের পক্ষেও একজন সৈনিক নিহত হয়েছেন।

দুই দেশের মধ্যে যেকোনও যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সামরিক ভারসাম্য স্পষ্টভাবে থাইল্যান্ডের পক্ষে। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর মতে, থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার, যেখানে ক্যাম্বোডিয়ার বাহিনী মাত্র ১ লক্ষের কিছু বেশি। থাইল্যান্ডের আধুনিক ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে উন্নত এবং প্রযুক্তিনির্ভর। এফ-১৬ ফাইটার জেট ও অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার ব্যবহারে তারা এগিয়ে। অন্যদিকে, ক্যাম্বোডিয়ার সশস্ত্র বাহিনী এখনো অনেকাংশে পুরনো সরঞ্জাম ও সীমিত বাজেটের ওপর নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন: ওইখানে ট্যাটু থাকায় বিমানবন্দর থেকেই ব্রিটিশ পর্যটককে ঘাড় ধাক্কা! প্রশ্ন উঠছে বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা নিয়ে

উল্লেখ্য, এই সামরিক অসমতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়, তাহলে থাইল্যান্ড সহজেই আক্রমণাত্মকভাবে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ উভয় দেশের জন্যই বিপজ্জনক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। গত সপ্তাহে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে একাধিক থাই সেনা আহত হন। এরপর পাল্টা কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে একে অপরের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে দুই দেশই দূতাবাসের কার্যক্রম নেমে আনে সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

আসিয়ান (ASEAN) জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই সংঘাত থামাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেন। তিনি থাইল্যান্ডের কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ও ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেটের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট শুক্রবার জানান, তিনি আনোয়ার ইব্রাহিমের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন এবং থাইল্যান্ডও সম্মত হয়েছিল বলে জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে থাই সরকার সিদ্ধান্ত পাল্টে, 'পরে উপযুক্ত সময়ে আলোচনার' কথা বলে পিছিয়ে আসে।

অন্যদিকে থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “থাইল্যান্ড শান্তিপূর্ণ সমাধানে একমত হলেও ক্যাম্বোডিয়ার সেনারা আমাদের ভূখণ্ডে নির্বিচারে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ক্যাম্বোডিয়ার সদিচ্ছার অভাব প্রমাণ করে।” তবে থাই সরকার এই সংঘর্ষকে যুদ্ধ ঘোষণা নয়, বরং “সীমান্ত রক্ষায় প্রতিরক্ষা-জনিত পদক্ষেপ” বলে ব্যাখ্যা দিয়েছে। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৫৮,০০০ মানুষ সীমান্তবর্তী গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্যাম্বোডিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রায় ২৩,০০০ মানুষ স্থানত্যাগ করেছেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে থাইল্যান্ড ক্যাম্বোডিয়ার সীমান্তঘেঁষা আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করেছে। সন্ধ্যায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নিউ ইয়র্কে এক জরুরি বৈঠকে বসেছে এই সংকট নিয়ে, যদিও বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংঘর্ষ।