মিল্টন সেন, হুগলি: কোনও মিছিল, মিটিং বা সভা করে নয়। একা একাই চালাচ্ছেন ২১ জুলাইয়ের প্রচার। তাও আবার ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে। মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মমতা-ভক্ত এক যুবক। ভাই দাস। 

 

আগে ব্যান্ডেল থেকে হাওড়া, সব স্টেশনের নাম দিয়ে ছড়া লিখে বই ছাপিয়ে ছিলেন। 'একাই একশো মমতা' বই লিখে নিজেই ট্রেনে বিক্রি করেছেন হুগলির বাসিন্দা ভাই দাস। ভাই ট্রেনে হকারি করেন। সকালে কয়েক ঘণ্টার হকারি। তারপর গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েন ২১ জুলাইয়ের প্রচার করতে। ট্রেনে, স্টেশনে, প্ল্যাটফর্মে। 

 

সর্বত্রই চলছে তাঁর প্রচার। গত ১০ জুলাই তিনি নেমেছেন শহিদ দিবসের প্রচারে। টানা প্রচার চালাবেন ২০ জুলাই পর্যন্ত। এভাবে কেন প্রচার করেন? উত্তরে ভাই দাস বলেন, এটা তিনি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে করেন না। ১৯৯৮ সালে যখন তৃণমূল দলটি তৈরি করেন মমতা ব্যানার্জি সেই সময় থেকেই প্রতিবছর একুশে জুলাইয়ের ধর্মতলা সভার সমর্থনে প্রচার করেন তিনি। একা একাই প্রচার করেন। মানুষকে আহ্বান করেন ২১ জুলাই ধর্মতলায় সভায় যাওয়ার জন্য। 

 

তাঁর লেখা মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে লেখা বই ওই দিন ধর্মতলায় বিক্রি করেন ভাই দাস। তবে ২১ জুলাই সমাবেশের প্রচারের পেছনে রয়েছে তাঁর ভালবাসা। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নেই। ভাই দাস বলেন, তিনি দিদিকে ভালবাসেন। তিনি দিদির ভক্ত। তাই তিনি নিজের উদ্যোগে এই প্রচার করে থাকেন। 

 

আরও পড়ুন: দুই ভাই, এক বউ! হিমাচলের দ্রৌপদী প্রথায় বিয়ে, তাক লাগিয়ে দিল নিমন্ত্রিতদের

 

৩২ বছর আগে কী ঘটেছিল ২১ জুলাই? কেন চলেছিল গুলি? ফিরে দেখা রক্তাক্ত দিন

 

১৯৩২ সালের ২১ জুলাই, মমতা ব্যানার্জির ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই ধর্মতলা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই ঘা এখনও দগদগে। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। মমতা ব্যানার্জি তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে শহরে বিভিন্ন স্থানে ছবি সহ হোর্ডিং দিয়েছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য আজকের জেনারেশনকে একুশের গুরুত্ব বোঝানো। নেত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জির লড়াইয়ের ইতিহাসটা তুলে ধরা ।

 

১৯৯৩ সাল। রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত সে-সময় বিরোধীদের মুখে। আর সেই সময় বিরোধীপক্ষের অন্যতম লড়াকু মুখ মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।

 

সেদিনের ঘাটন এখনও দগদগে বাংলার রাজনীতিতে। ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়। কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা নিজে। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ইব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। 

 

পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অশান্তির ভরকেন্দ্র ছিল মধ্য কলকাতা। ধীরে ধীরে সারা কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। তখন গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। 

কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি ।

ছবি: পার্থ রাহা