আজকাল ওয়েবডেস্ক: রানাঘাটে অনলাইন প্রতারণার মামলায় বড় সাফল্য রাজ্য পুলিশের। ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ জনের মধ্যে ৯ জনকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। শুক্রবার কল্যাণীর এডিজি আদালতে এই মামলার রায় ঘোষণা হয়। ভবানী ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা জানান, এই চক্রের মাধ্যমে এক কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে। প্রতারকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা জমা পড়ার প্রমাণও পুলিশের হাতে রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্য চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে পেশ করা হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২০০০ পাতার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। বাকি আরও চার অভিযুক্তকে অন্য মামলায় বিচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ৬ নভেম্বর। নদিয়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত এক বিজ্ঞানীকে প্রতারকরা বলে তাঁকে 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' করা হয়েছে। এরপর তাঁকে ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় ১ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে ওই বিজ্ঞানী পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে কল্যাণী সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ঘটনার খোঁজ নিয়ে এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু হয় অভিযান। দেখা যায় প্রতারকরা বিভিন্ন রাজ্যে বসে থেকে সেখান থেকে কলকাঠি নেড়েছে। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও গুজরাটে অভিযান চালিয়ে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্কের পাসবই, চেকবই, প্যান কার্ড-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে পুলিশ।

শুরু হয় এই মামলার বিচার। সমস্ত পক্ষের শুনানির পর বৃহস্পতিবার আদালত এই মামলায় অভিযুক্ত ন'জনকে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালতের এই রায় ঘোষণা করার পর উচ্ছসিত সরকার পক্ষের আইনজীবী ও পুলিশ মহল। সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, 'এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নজির গড়ল পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। দেশে এই প্রথম ডিজিটাল অ্যারেস্টের অপরাধে প্রথম কারুর সাজা ঘোষণা হল। এই ধরনের অপরাধ হল অর্থনৈতিক আতঙ্কবাদ। যার মাধ্যমে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।' পুলিশ এবং সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, এই রায় ভারতের ডিজিটাল প্রতারণা বিরোধী আইনি লড়াইয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

এরাজ্য-সহ গোটা দেশে একের পর এক ডিজিটাল অ্যারেস্টের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ফোনের মাধ্যমে অপরাধী নিজেকে কোনও তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের লক্ষ্য হয় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তুলনামূলক বয়স্ক ব্যক্তিরা। আগে থেকে খোঁজখবর নিয়ে রীতিমতো আটঘাট বেঁধে অপরাধীরা নেমেছে এরকম নজিরও আছে। এমন ঘটনাও সামনে এসেছে প্রতারিত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে তাঁকে দিনের পর দিন তাঁর ঘরেই আটকে রাখা হয়েছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে রাজ্যের বাইরে থেকে অপরাধীরা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। বুঝে ওঠার আগেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে প্রতারিত ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। স্বাভাবিকভাবেই এই মামলার রায়ে আরও একবার প্রমাণিত হল সাইবার অপরাধ জটিল হলেও প্রযুক্তি এবং চেষ্টা থাকলে অপরাধী গ্রেপ্তার করা সম্ভব এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আদালতের সামনে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরাও সম্ভব। তদন্তকারীদের মতে, জনসচেতনতা ও কড়া নজরদারির মধ্যে দিয়েই এই ধরনের প্রতারণা রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।