সংবাদ সংস্থা মুম্বই: প্রবীণ অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মনোজ কুমার শুক্রবার ৮৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। তাঁর রেখে যাওয়া দেশপ্রেমে ভরপুর চলচ্চিত্রের উত্তরাধিকার আজও ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে উজ্জ্বল। দেশাত্মবোধক চরিত্রে একের পর এক অবিস্মরণীয় অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন এক অনন্য উপাধি — ‘ভারত কুমার’। ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক মনোজ কুমার শুক্রবার ভোর ৪টা ৩ মিনিটে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দীর্ঘদিন ধরে ডিকম্পেনসেটেড লিভার সিরোসিস-এ ভুগছিলেন, যা বর্ষীয়ান শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভগৎ সিং-এর জীবন অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘শহীদ’-এর জন্য মনোজ কুমার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রায় এক দশক আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান,“ ‘শহীদ’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার বাবদ যে অর্থ পেয়েছিলাম, সবটুকুই ভগৎ সিংয়ের পরিবারকে দান করেছিলাম। এই পুরস্কার আমার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এক তৃপ্তি দিয়েছিল।”
‘শহীদ’ ছবিটি পরিচালনা করেন এস. রাম শর্মা। এই ছবিতে মনোজ কুমার ছাড়াও অভিনয় করেন কমিনী কৌশল, প্রণ, ইফতিখার, নিরুপা রায়, প্রেম চোপড়া, মদন পুরী ও আনোয়ার হুসেন। সেই সাক্ষাৎকারেই তিনি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতার কথা বলেন— “দিল্লির একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যজিৎ রায় (মনিকদা)-র সঙ্গে দেখা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তিনি কি আমার ‘উপকার’ দেখেছেন? বললেন দেখেছেন, কিন্তু একটু 'অতিনাটকীয়' মনে হয়েছে। আমি হাসতে হাসতে বললাম—‘তাহলে ‘চরুলতা’-তে যখন বজ্রপাতের মধ্যে সৌমিত্র মাধবীকে দেখে, সেটাও কি অতিনাটকীয় নয়?’ মনিকদা আমাকে স্নেহভরে চেপে, একগাল হেসে বলেছিলেন—‘তাই তো, তুমি তো একেবারে ঠিক জায়গায় আমাকে ধরেছ!”
‘উপকার’, ‘রোটি কপড়া ঔর মকান’, ‘পূরব অউর পশ্চিম’- এমন একের পর এক ছবি ভারতীয় আত্মপরিচয় ও জাতীয়তাবোধকে তুলে ধরেছে। তাঁর ভাবনা ও কণ্ঠ যেন হয়ে উঠেছিল ভারতের প্রাণ। পদ্মশ্রী (১৯৯২) ও দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (২০১৫)-এ ভূষিত মনোজ কুমার রূপালি পর্দায় ভারতীয় আত্মার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। তাই মনোজ কুমার শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না — তিনি ছিলেন ভারতীয় চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক।
