আজকাল ওয়েবডেস্ক: তিনি ঘাম ঝরাবেন, তিনি বল করবেন নাগাড়ে, উইকেট নেবেন। আবার তাঁকেই দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। পানের থেকে চুন কসলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকেই ট্রোলিং করা হবে। অটোচালকের ছেলে বলে তাঁকে অসম্মানিত হতে হবে।
কিন্তু জশপ্রীত বুমরাহ নামের মহীরূহ না থাকলে মহম্মদ সিরাজই দেশকে রক্ষা করবেন। তিনি প্রতিপক্ষকে ভাঙবেন, বিপক্ষের ব্যাটিং লাইন আপকে মচকাবেন, কিন্তু পাদপ্রদীপের আলো তাঁর জন্য নয়। তিনি নায়ক কোনওদিনই হবেন না। পার্শ্বনায়ক হিসেবেই তাঁকে থেকে যেতে হবে চিরকাল।
অথচ বুমরাহ না থাকলে সিরাজই ভারতের রক্ষাকর্তা। ওভালে আরও একবার তা প্রমাণিত হল। ওভালে সিরাজ নিলেন চার-চারটি উইকেট। বুমরাহ ছাড়া ভারতের বোলিং লাইন আপ অনভিজ্ঞ। অনভিজ্ঞতায় মোড়া এই বোলিং শক্তির নেতা একজনই। তিনি মহম্মদ সিরাজ। ১৬.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮৬ রানের বিনিময়ে চার-চারটি উইকেট নেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাথরুমে কাঁদতে দেখেন তারকা ক্রিকেটারকে, ২০১৯ বিশ্বকাপের অজানা গল্প শোনালেন চাহাল
বুমরাহ না থাকলেই তিনি জ্বলে ওঠেন। সাংবাদিকদের অবশ্য সিরাজ বলছেন, ''এটা আবার আপনারা মনে করবেন না যে বুমরাহর অনুপস্থিতিতেই আমি ভাল খেলি।''

দেশের জন্য নিজেকে নিংড়ে দেন সিরাজ। বুমরাহ ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের জন্য পাঁচটা টেস্টের সবক'টি খেলেননি। একমাত্র সিরাজ কিন্তু টানা পাঁচটি টেস্ট ম্যাচই খেলছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এতদিন ছিলেন ক্রিস ওকস। ইংল্যান্ডের সেই বোলারও পঞ্চম টেস্টে ছিটকে যান ওভাল টেস্ট থেকে। ফলে দু'দলের মধ্যে সিরাজ একাই পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলছেন। অনেকেই মনে করেন সিরাজ নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার ফলে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে যাচ্ছেন, শেষ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি তো মহম্মদ সিরাজ। বাইরের কথায় তিনি কর্ণপাত করেন না। তিনি তাঁর কাজ করে চলেন।
বেন স্টোকস ছিটকে গিয়েছেন পঞ্চম টেস্ট থেকে। সিরাজ অনুসরণ করেন তাঁকে। বলেন, ''প্রতিপক্ষের ক্রিকেটারের থেকেও তো অনেককিছু শিক্ষণীয়।'' স্টোকস নিজেকে বিপন্ন করেও নাগাড়ে বল করে যান। সিরাজও তাই করছেন। কিন্তু পাঁচ উইকেটের দেখা তো মেলে না সবসময়ে। কদাচিৎ পাঁচ উইকেটের দর্শন পান তিনি। সিরাজ এখানেও থেকে যান ভাগ্য বিড়ম্বিত এক নায়ক হিসেবে। সিরাজ বলছেন, ''এটা হতাশাজনক। ব্যাটকে বারবার পরাস্ত করেও উইকেট না পাওয়াটা কিন্তু হতাশারই জন্ম দেয়। কিন্তু আমি প্রশেসে বিশ্বাস রাখি। আমার বিশ্বাস ঈশ্বর সবটা দেখছেন। আজ হয়তো উইকেট আসছে না, কাল নিশ্চয়ই আসবে।''

সিরাজের কথা তাঁর ক্রিকেটের মতোই সহজ সরল। সিরাজ একথাও জানেন দল থেকে বাদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এলে তাঁর উপরেই কোপ পড়বে সবার উপরে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই যেমন ঘটল। অস্ট্রেলিয়ায় নিজের শেষ বিন্দু পর্যন্ত দেওয়ার পরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা হল না হায়দরাবাদি তারকার। সিরাজ চুপ করে থাকেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় না বিস্ফোরক সব মন্তব্য। বিতর্কিত কথাও বেরোয় না। বল হাতে পড়লে সিরাজ হয়ে যান অন্য মানুষ। দেশের সম্মান তাঁর কাছে সবার আগে। বুমরাহ নেই তো কী হয়েছে, সিরাজ তো আছেন। কিন্তু নায়কের মঞ্চ তাঁর জন্য নয়। তিনি চিরকাল পার্শ্বচরিত্র হয়েই থেকে যাবেন।
আরও পড়ুন: কেন রেগে গেলেন রুট! এমন কি বলেছিলেন প্রসিধ জেনে নিন
