আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে নিকানো উঠোনে ঝরে রৌদ্র, বারান্দায় লাগে জ্যোৎস্নার চন্দন। এখন বাংলা ভাষা শুনলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসেন উর্দিধারীরা। চলে বাঙালি নির্যাতন।
এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা আক্রান্ত হন ভিনরাজ্যে। বাংলা বলে নাকি কোনও ভাষারই অস্তিত্ব নেই, বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যর ঘোষণা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এহেন ঘটনাপ্রবাহে আশঙ্কিত এই রাজ্য। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে শাসক দল। বিদ্বজ্জনরা বলছেন, ''বাঙালিরা যতটা বাংলা ভাষা জানে, তোমরা তো ততটা জানো না।'' বাংলা ভাষাকে খাটো করার অহর্নিশ এই চেষ্টায় ফুঁসছে বাংলা। ফুটছে বাংলার খেলার মাঠ।
বাঙালি নির্যাতন, বাংলা ভাষার অসম্মান নিয়ে সোচ্চার হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। বুধবার ডুরান্ড কাপের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। প্রতিপক্ষ ছিল নামধারী এফসি। সেই ম্যাচের গ্যালারিতে দেখা গিয়েছিল বিশাল ব্যানার। সেখানে লেখা ছিল, ''ভারত স্বাধীন করতে সেদিন পরেছিলাম ফাঁসি, মায়ের ভাষা বলছি বলে, আজকে বাংলাদেশী।''
শনিবার গর্জে উঠল মোহনাবাগান গ্যালারি। ডুরান্ড কাপে এদিন মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ ছিল ডায়মন্ড হারবার। সেই ম্যাচের আগে থেকেই গ্যালারি ছয়লাপ রক্ত গরম করা ব্যানারে। মোহনবাগান ফ্যান ক্লাব মেরিনার্স ডি এক্সট্রিম আলট্রাস অফ মোহনবাগানের তরফ থেকে লেখা হয়েছে, “দেশটা কারোর বাপের নয় , নয়কো জাতের খেলা, এই বাঙালীই ঘুচিয়েছিলো, পরাধীনতার জ্বালা।“

গত কয়েকদিন ধরে বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাঙালি নির্যাতন এবং বাংলা ভাষার অমর্যাদার প্রেক্ষিতে মোহনবাগান গ্যালারি থেকে মনে করিয়ে দেওয়া হল বাঙালির গর্বের ইতিহাস। অভিনব সেই ব্যানারে রয়েছে ইতিহাসের ছোঁয়া। সেখানে রয়েছেন রবিঠাকুর, সুভাষচন্দ্র, ক্ষুদিরাম, বিবেকানন্দ, বঙ্কিম-সহ আরও মনীষীরা। মোহনবাগানের ঐতিহাসিক শিল্ড জয়ের আখ্যানও রয়েছে। লেখা হয়েছে,''বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা--সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক, হে ভগবান।''
ফ্যান ক্লাবের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়েছে, ''আমরা গর্বিত বাঙালি ভাষাভাষী ভারতীয়। আমাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কেউ করবেন না। কে আগে ভারতীয়, তা আমাদের শেখানোর প্রয়োজন নেই। দেশপ্রেম কী, তা আমাদের কেউ শেখাতে আসবেন না। আমরা কারা, তা আমরা ভালো করেই জানি — আমাদের সংস্কৃতিতে আমাদের শিকড়, আর আমাদের দেশপ্রেম নিঃস্বার্থ ও অটল।''
বাংলা মায়ের ভাষা। বাংলা রবিঠাকুরের ভাষা। বাংলা বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা। তাঁরা এই ভাষাকে গড়েছেন। এই ভাষাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। সেই ভাষারই নাকি অস্তিত্ব নেই। হাস্যকর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়েছে কংক্রিটের গ্যালারিতে। শনিসন্ধ্যার যুবভারতীতে ওই ব্যানারে একই সঙ্গে 'জন গণ মন ও বন্দেমাতরম'-এর সহাবস্থান। রবিঠাকুর ও বঙ্কিমের সৃষ্টি আমাদের রক্তের গতি তেজিয়ান করে তোলে। সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে লেখা, ''শহীদের রক্ত, কবির নোবেল, ভারতের মুকুটে বাংলা জুয়েল।''
মাসখানেক ধরেই দেশজুড়ে বাঙালি বিদ্বেষ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। ভিনরাজ্যে শুরু হয়েছিল বাঙালিদের ধরপাকড়। বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও বাঙালি শ্রমিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বাংলাদেশে। চলছিল মারধর। এই রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ঘটনাও আছড়ে পড়েছে এই রাজ্যের তটভূমিতে।
খেলার মাঠ চিরকাল প্রতিবাদী। ১৯১১ সালে মোহনবাগানের শিল্ড জয় নেহাত কোনও ফুটবল ম্যাচ ছিল না। তা ছিল স্বাধীনতার লড়াই। ব্রিটিশ সূর্যও যে অস্তমিত হয়, তা দেখিয়ে দিয়েছিল এগারো জন দেশনায়ক।
এখনও বাংলার মাঠ আগের মতোই সংবেদনশীল। এখনও এই মাঠ থেকে ওঠে প্রতিবাদ-বিপ্লবের ঝড়। শনি সন্ধ্যার যুবভারতীতে আরও একবার ঝড় উঠল ওই সবুজ-মেরুন ভূখণ্ড থেকে।
আরও পড়ুন: পাণ্ডিয়ার মতো শরীর তৈরি করতে চান, তাহলে মেনে চলুন তারকা অলরাউন্ডারের এই পরামর্শগুলো
