আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘স্যালুট’ ঋষভ। ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের চতুর্থ টেস্টে প্রথম ইনিংসের পর টিম ইন্ডিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটারকে এভাবেই সম্মান জানাল ম্যাঞ্চেস্টার। একে তো পায়ের ওই অবস্থা, ফুলে আছে, হাসপাতাল থেকে স্ক্যান করিয়ে ফিরেছেন, সেই অবস্থাতেই ব্যাট করতে নামলেন দলের প্রয়োজন পড়তেই। শুধু নামলেন না, অর্ধশতরান করলেন পন্থ, জোফ্রা আর্চারকে ওড়ালেন গ্যালারিতে। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কষ্ট হচ্ছে, তারপরেও সিঙ্গল নিলেন, গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়লেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে। শেষ দিকে পন্থের ব্যাটিংয়ে ভর করেই ৩৫০ রানের গন্ডি পেরোল টিম ইন্ডিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেম স্মিথ ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন, ভাঙা চোয়াল নিয়ে অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন অনিল কুম্বলে, ইংল্যান্ডেই পায়ের চোট নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলেন নাথান লায়ন। তাদের সঙ্গে একই বিন্দুতে মিলে গেলেন ঋষভও। প্রসঙ্গ যখন দেশের প্রতিনিধিত্ব করার, তখন কেউই পিছপা হননা, পন্থও নিজের সবটুকু উজাড় করে দিলেন এদিন। টেস্টের প্রথম দিনে ক্রিস ওকসের বল আছড়ে পড়েছিল পন্থের বুটে। ফিজিও-ও তাঁকে সুস্থ করতে পারেননি। অ্যাম্বুল্যান্স করে মাঠ ছাড়েন পন্থ। দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে ভেসে এল পন্থকে নিয়ে খবর।
আরও পড়ুন: চোট নিয়ে রূপকথা! অ্যান্টিগার কুম্বলে আর ম্যানচেস্টারের পন্থ মিলে গেলেন একই বিন্দুতে
তাঁর পায়ের পাতায় চিড় ধরেছে। সবাই যখন ধরেই নিয়েছেন পন্থের পক্ষে আর ব্যাট করতে নামা সম্ভব নয়, ঠিক তখনই অবাক করার মতো ঘটনা। শার্দূল ঠাকুর ফিরে যাওয়ার পরে দেখা যায় ড্রেসিং রুম থেকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নেমে আসছেন ঋষভ পন্থ। ভাল করে হাঁটতে পর্যন্ত পারছেন না তিনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি ভাল করে হাঁটতে পারছেন না। খোঁড়াচ্ছেন। প্যাভিলিয়ন থেকে নেমে ক্রিজ পর্যন্ত পৌঁছতেই লেগে গেল অনেকটা সময়। তখনও তিনি জানেন না, সামনের পায়ে ডিফেন্স করতে পারবেন কিনা। তিনি জানেন না দ্রুত সিঙ্গলস নিতে পারবেন কিনা। তিনি জানেন না সহজাত আক্রমণাত্মক শট খেলতে পারবেন কিনা।
ঋষভ পন্থ অভাবনীয় সব কাজ করেন। পন্থ অকুতোভয়। ভয়ডর নেই তাঁর। তাঁর শট নির্বাচন নিয়ে প্রাক্তনরা সমালোচনা করেন। কিন্তু ঋষভ পন্থ হাল ছাড়ার বান্দা নন। দল বিপন্ন। তিনি আর সরে থাকতে পারলেন কোথায়! দলের খারাপ সময়ে নেমে পড়লেন ব্যাট করতে। বেন স্টোকসের মতো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীও পন্থকে দেখে হতবাক। এভাবেও কেউ নামতে পারেন! আসলে পন্থ তো মৃত্যুঞ্জয়ী। মারাত্মক পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েও পন্থ ফিরে এসেছেন। সেই তিনি কী করে ড্রেসিং রুমে বসে থাকেন পায়ের পাতার চোট নিয়ে! তিনি যখন ড্রেসিং রুম থেকে মাঠে নামছেন সবাই উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে শুরু করে দেন।
এরকম এক যোদ্ধার প্রয়াসকে হাততালি না দিয়ে কেউ পারেন! তাঁর মাঠে নামার মুহূর্তটাও কম নাটকীয় নয়। শার্দূল ঠাকুর আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছেন। আর পন্থ প্রবেশ করছেন। শার্দূল সতীর্থ পন্থের মাথায় হাত রাখলেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস পর্যন্ত তাকিয়ে ছিলেন পন্থের দিকে। বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁর, ভাঙা পায়ের পাতা নিয়ে কেউ নেমে পড়তে পারেন। উল্লেখ্য, এদিন ৩৫৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। শার্দুল ঠাকুর ৪১ করে ফিরে যান, পন্থ করেন ৫৪। ওয়াশিংটন সুন্দর ২৭ রান করে ফিরে যাওয়ার পর টেল এন্ডাররা কেউই বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। ইংল্যান্ডের হয়ে ৭২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।
