ইস্টবেঙ্গল - ১ (ডিয়ামানটাকোস-পেনাল্টি)
ওড়িশা এফসি - ২ (রয় কৃষ্ণ, মুর্তাদা ফল)
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাগ্যের চাকা ঘুরল না। আবার হার। আইএসএলে হাফ ডজন। টানা আট। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ওড়িশা এফসির কাছে ২-১ গোলে হার ইস্টবেঙ্গলের। ছয় ম্যাচের সবেতেই হার। কোচ বদলেও ফিরল না ভাগ্য। ধেয়ে আসছে ডানা। বৃহস্পতিবার ওড়িশার পুরী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরদীপের মধ্যে ল্যান্ডফল হবে ঘূর্ণিঝড়ের। তার আগেই ভুবনেশ্বরে ম্যাচের শুরুতে 'ডানা' মেলেছিলেন লাল হলুদের ফুটবলাররা। কিন্তু টেক অফ হল না। প্রথমার্ধেই ম্যাচ শেষ করে দিতে পারত অস্কার ব্রুজোর দল। একাধিক সুযোগ পায় কলকাতার প্রধান। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। শেষপর্যন্ত রক্ষণের ভুলের খেসারত দিতে হল। অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে ফেরা উচিত ছিল। কিন্তু খালি হাতে ফিরছে ইস্টবেঙ্গল। প্রভাত লাকরা লালকার্ড দেখায়, শেষ ১৫ মিনিট দশজনের লাল হলুদের ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যায়। ডার্বিতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেনি ক্লেইটন সিলভা, মাদি তালালরা। পুরোপুরি একপেশে ম্যাচ হয়েছিল। কিন্তু এদিন লড়াই করে হার ইস্টবেঙ্গলের। বরং বলা যায়, তিন পয়েন্ট মাঠে ফেলে এল ইস্টবেঙ্গল।
আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের সেরা প্রথমার্ধ। কম করে হলেও অন্তত তিন গোলে এগিয়ে যেতে পারত অস্কার ব্রুজোর দল। শুরুতে ঝড় তোলে লাল হলুদ। পুরোপুরি ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক। প্রথম ১০ মিনিটে পাঁচটা গোলের সুযোগ। তিনটে নিশ্চিত সেভ অমরিন্দর সিংয়ের। ডার্বির ভোরে কলকাতায় পা রেখেছেন কার্লেস কুয়াদ্রাতের উত্তরসূরি। মাত্র দু'দিন অনুশীলনের সুযোগ পান। তারমধ্যে অনেকটাই বদলে দিয়েছেন দলের স্পিরিট। মঙ্গল সন্ধেয় ম্যাচের শুরুতে এক অন্য ইস্টবেঙ্গলকে পাওয়া যায়। ডার্বির দলে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন করেন। প্রথম একাদশে ফেরেন হিজাজি, জিকসন, ডিয়ামানটাকোস এবং বিষ্ণু। ৪-৫-১ ফরমেশনে শুরু করেন অস্কার।
ম্যাচের ৩ মিনিটের মাথায় সল ক্রেসপোর গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। তার দু'মিনিটের মধ্যে বাঁ দিক থেকে নন্দকুমারের জোরাল শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচায় ওড়িশার গোলকিপার। তার দু'মিনিটের মাথায় আবার সুযোগ। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ডিয়ামানটাকোসের বাঁ পায়ের শট বাঁচান অমরিন্দর। আইএসএলের প্রথম পাঁচ ম্যাচ হেরে লিগের তলানিতে থাকা দল যে বিপক্ষের ডেরায় এইভাবে শুরু করতে পারে, ভাবে যায়নি। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভাড়ার শূন্য।
যেভাবে ফোর্থ গিয়ারে শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল, সেই ছন্দ দ্বিতীয়ার্ধেও রাখতে পারলে ম্যাচের রেজাল্ট অন্যরকম হত। প্রথমার্ধে ভুরিভুরি সুযোগ নষ্ট। ওড়িশাকে খেলায় ফেরার সুযোগ নিজেরাই করে দেয়। ম্যাচের ১০ মিনিটে গোলের আরও একটা নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়া। বল নিয়ে ছয় গজের বক্সে ঢুকে পড়েন বিষ্ণু। নিজে শট নিলে হয়তো গোল হয়ে যেত। কিন্তু ডিয়ামানটাকোসের উদ্দেশে বল বাড়ান। ধরতে পারেনি গ্রিসের স্ট্রাইকার। বিষ্ণুর অভিজ্ঞতার অভাবের খেসারত দিতে হয়। তার এক মিনিটের মধ্যে আবার গোলের সুযোগ। এবার মাদি তালালের শট বাঁচান ওড়িশা কিপার। প্রথম ১০-১২ মিনিট সার্জিও লোবেরার রক্ষণকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ইস্টবেঙ্গল। ২০ মিনিটে প্রথম সুযোগ ওড়িশার। রয় কৃষ্ণর শট স্লাইডিং ট্যাকেলে বাঁচান আনোয়ার। কিন্তু বেশিক্ষণ দুর্গ অক্ষত রাখতে পারেননি। ম্যাচের ২২ মিনিটে ওড়িশাকে এগিয়ে দেন রয় কৃষ্ণ। খেলার গতির বিরুদ্ধে গোল। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে হিজাজি এবং প্রভাতকে পরাস্ত করে ডান পায়ের শটে গোল ফিজির স্ট্রাইকারের। এরপরও দাপট ছিল ইস্টবেঙ্গলেরই। তবে নৈপুণ্যের অভাব।
দুই প্রান্ত থেকে নিখুঁত ক্রস বা সেন্টার তুলতে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হয় বিষ্ণু, নন্দরা। ফলে বলের অপেক্ষা বাড়ে ডিয়ামানটাকোসের। বেশ কয়েকবার মেজাজ হারাতে দেখা যায় তাঁকে। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল ওড়িশার সামনে। ইসাক রালতের পাস থেকে রয় কৃষ্ণর গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। বিরতির আগেই সমতা ফেরায় ইস্টবেঙ্গল। বক্সের মধ্যে মাদি তালালের শট থৈবা সিংয়ের হাতে লাগে। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে গোল করেন দিমিত্রিয়স ডিয়ামানটাকোস। লাল হলুদ জার্সিতে প্রথম গোল গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতার। তবে কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে বিরতিতে ৩-১ গোলে এগিয়ে থাকার সুযোগ ছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলেরই গতি কিছুটা কমে যায়। ইস্টবেঙ্গলের খেলার ধরন ধরে ফেলেন লোবেরা। যার ফলে বিরতির পর খুব বেশি ওপেন সুযোগ পায়নি অস্কারের দল। ম্যাচের ৬৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় ওড়িশা। জাহুর ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল মুর্তাদা ফলের। ধারেকাছে ছিলেন না হিজাজি, আনোয়াররা। ওড়িশার ডিফেন্ডার পুরোপুরি আনমার্কড ছিলেন। আইএসএলে এর আগেও বেশ কয়েকবার সেটপিস থেকে গোল করতে দেখা গিয়েছে মুর্তাদাকে। তারপরও কীভাবে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা এমন ভুল করল বোঝা দায়। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ, লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন প্রভাত লাকরা। বাকি ১৫ মিনিট দশজনে খেলতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। শেষদিকে গোলের জোড়া সুযোগ পান দিয়েগো মরিসিও। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে পরিবর্ত ফুটবলারের নিশ্চিত গোল বাঁচান প্রভসুখন গিল। তবে হারলেও, দলের পারফরম্যান্সে হয়তো কিছুটা সন্তুষ্ট হবেন অস্কার।
