আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডার্বি জয়ের এক সপ্তাহ কাটেনি। সবে ছয় দিন আগেই কল্যাণীতে মরশুমের প্রথম বড় ম্যাচ জেতে ইস্টবেঙ্গল। সেই জয়ের রেশ চলল শুক্রবার সন্ধেয় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। গঙ্গাপারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের জাঁকজমক অনুষ্ঠানের ৪৮ ঘণ্টা পরই ঘটা করে পালিত হল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ১০৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের অনুষ্ঠান ছিল একটু ভিন্ন স্বাদের। বহু বছর পর মরশুম শুরুতে বড় ম্যাচ জিতেছে লাল হলুদ। ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি জয়ী দল মঞ্চে উঠতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে সমর্থকরা। জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন চলছে ডার্বির জয়সূচক মুহূর্ত। সংবর্ধনা জানানো হয় ম্যাচের নায়ক সায়ন সহ গোটা ইস্টবেঙ্গল দলকে। বিনো জর্জ জানান, ‘‌সমর্থকদের ধন্যবাদ। তাঁদের জন্য আমরা আজ এই জায়গায়। ছেলেদের বলেছিলাম, ম্যাচটা জিততেই হবে।’‌ 

নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা হল। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক দেবাশিস কুমার। এছাড়াও ছিলেন সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি, অভিষেক ডালমিয়া সহ ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলাররা। জীবন চক্রবর্তী মেমোরিয়াল ‘‌বছরের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়’‌ এর সম্মানে সম্মানিত করা হয় পিভি বিষ্ণুকে। লাল হলুদের তারকা ফুটবলার জানান, সমর্থকদের জন্যই সাফল্য। বিষ্ণু বলেন, ‘‌এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুবই খুশি এবং গর্বিত। সতীর্থ, কোচ, কর্তাদের ধন্যবাদ। সমর্থকদের জন্য আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। এই ক্লাবে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করছি। ঐতিহ্যশালী ক্লাব। জয় ইস্টবেঙ্গল।’‌ 

ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে হাজির ছিলেন কোচ অস্কার ব্রুজো সহ গোটা দল। সবাইকে সংবর্ধিত করা হয়। এক ছাদের তলায় প্রাক্তন এবং বর্তমানের একঝাঁক তারকার মিলন দেখে অভিভূত লাল হলুদের স্প্যানিশ কোচ। একইসঙ্গে আশার বাণী শোনান সমর্থকদের। অস্কার বলেন, ‘‌আমাদের ওপর বড় দায়িত্ব। সেটা পালন করার চেষ্টা করব। এখানে পুরোনো প্রজন্মের প্লেয়ারদের দেখে ভাল লাগছে। ইস্টবেঙ্গলের সমৃদ্ধ ইতিহাস উঠে এসেছে। আমাদের সবার জন্য গর্বের মুহূর্ত। নতুন প্লেয়াররা আমাদের সাপোর্ট করতে চলে এসেছে। প্র্যাকটিসের প্রথম সপ্তাহে মনে হয়েছে, এই বছরটা পরিবর্তনের বছর হতে পারে। জয় ইস্টবেঙ্গল। লাল হলুদের জয়।’‌
দীর্ঘদিন বাংলাদেশে থাকায় ভাঙা বাংলায় কথা বলতে পারেন ব্রুজো। এদিন তাই দিয়ে লাল হলুদ জনতার মন জয় করে নেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সিনিয়র দল, রিজার্ভ দলের পাশাপাশি সংবর্ধনা দেওয়া হয় ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবল দলকে। 

সঙ্গীতা বাসফোরকে আলাদা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। ইস্টবেঙ্গল তথা ভারতের তারকা ফুটবলার সঙ্গীতা বলেন, ‘‌এই সম্মান পেয়ে ভাল লাগছে। ইস্টবেঙ্গল মেয়েদের দলকে সাপোর্ট করছে। আমরা চাই পুরো ভারত আমাদের সমর্থন করুন। আমরা এইভাবে এগিয়ে যেতে চাই। একসময় কষ্টের জীবন কাটিয়েছি। তাই জানি আরও পরিশ্রম করতে হবে। জাতীয় দলকে আগে নিয়ে যেতে হবে। এই বছর ইস্টবেঙ্গলে প্রথমবার খেলছি। এএফসিতে ইস্টবেঙ্গলকে আরও আগে নিয়ে যেতে চাই। একই সঙ্গে নিজেকেও।’‌ মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলার হাতছানি রয়েছে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না সঙ্গীতা। সম্মানিত করা হয় ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দলের কোচ অ্যান্টনি অ্যান্ড্রুজকেও। তাঁর হাত ধরেই এএফসির ‌ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছে ইস্টবেঙ্গল। অ্যান্টনি বলেন, ‘‌খুব ভাল লাগছে। এটা সম্ভব হত না ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্টের সমর্থন ছাড়া। সবাইকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে যারা আমাদের জন্য কাজ করছে। এটা সবার পরিশ্রমের ফল।’‌ বনোয়ারীলাল রায় মেমোরিয়াল ‘‌বছরের সেরা ফুটবলার’‌ সম্মান পান শৌভিক চক্রবর্তী এবং সৌম্যা গুগুলথ। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চেই আগামীর নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলল লাল হলুদের ছেলেদের এবং মেয়েদের দল।