ডায়াবেটিসকে সাধারণত আমরা রক্তে অতিরিক্ত শর্করার রোগ হিসেবেই দেখি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস কেবল ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের সমস্যা নয়, এটি শরীরের ভেতরে এমন সব পরিবর্তন আনে, যা ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। যাকে বিজ্ঞানীরা 'ডবল ট্রাবল ইফেক্ট' বলে ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ ধীরে ধীরে আরেকটি আরও ভয়ংকর রোগের পথ তৈরি করে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস শরীরের ইনসুলিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের মাত্রা সাধারণত বেশি থাকে, যাকে বলা হয় হাইপারইনসুলিনেমিয়া। অতিরিক্ত ইনসুলিন কোষকে বারবার বাড়তে উৎসাহিত করে, ফলে কোষ বিভাজনের গতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়। এই অস্বাভাবিক কোষবৃদ্ধিই ভবিষ্যতে ক্যানসারের বীজ বপন করতে পারে।
এর সঙ্গে আছে দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তশর্করা। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ খুব বেশি থাকলে কোষের ভেতরের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ নিজেকে ঠিক করার ক্ষমতা হারায়, ফলে জেনেটিক মিউটেশন জমতে থাকে যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়াবেটিস সাধারণত ওবেসিটি, উচ্চ রক্তচাপ ও হরমোনের ভারসাম্যের সঙ্গে দেখা দেয়। এগুলো শরীরে ক্রনিক ইনফ্লামেশন তৈরি করে। শরীরে দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ থাকলে কোষগুলো চাপের মধ্যে পড়ে এবং ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে লিভার, প্যানক্রিয়াস, কোলোরেক্টাল, স্তন ও জরায়ুর ক্যানসারের ঝুঁকি চোখে পড়ার মতো বৃদ্ধি পায়।
তবে এই ঝুঁকি কমানো সম্পূর্ণ সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমত, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ আর জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন-এগুলোই ঝুঁকি কমানোর বড় উপায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, কম চিনি ও কম চর্বিযুক্ত খাবার, প্রচুর সবজি ও ফল খাওয়া এগুলো বড় পরিবর্তন এনে দিতে পারে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল ক্যানসারের বড় ঝুঁকি, আর ডায়াবেটিসে এগুলো আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তাই এই অভ্যাস থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। পাশাপাশি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করা এবং চিকিৎসার সাফল্যের সম্ভাবনাও বেশি। তাই ডায়াবেটিস থাকলে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধেও নজর দেওয়া অপরিহার্য।
