আজকাল ওয়েবডেস্ক: কল্পবিজ্ঞানের গল্পে মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে প্রেমের কথা শোনা যায়। কিন্তু এখন তা বাস্তব জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এমন বহু নারী আছেন যারা নিজেদের জীবনে চ্যাটবটকে সঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে স্বামী বলে পরিচয় দিচ্ছেন, আবার কেউ প্রেমিক বা যৌন সঙ্গী হিসেবেও!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ট্যাটু শিল্পী তার এআই সঙ্গীকে প্রথমে মজা করে ডাকতেন, পরে বট নিজেই মানুষের মতো একটি নাম বেছে নেয়। ধীরে ধীরে তাদের কথোপকথন এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে যে নারীটি মনে করেন তার আসল জীবনের মতোই একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এমনকি তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গেও এই এআই চরিত্রকে পরিচয় করিয়ে দেন। নিউ ইংল্যান্ডে আরেক নারী আছেন, যিনি নিজের বাস্তব স্বামীর পাশাপাশি এআই স্বামীর সঙ্গে সংসার চালাচ্ছেন। তার কথায়, এই সঙ্গী তার অতীত ট্রমা সামলাতে সাহায্য করছে এবং থেরাপির সময়ও তিনি তাকে নিয়ে কথা বলেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এআই প্রেমিক বা প্রেমিকা তাদের মানসিক চাপ কমায় এবং একাকীত্ব দূর করে।

আরও পড়ুন: মাত্র ১৭০০ টাকায় ‘শুভরাত্রি’! নিজের অদ্ভুত গুণ দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন মহিলা

তবে এই অভিজ্ঞতা সবসময় আনন্দদায়ক নয়। মিদওয়েস্টের এক নারী জানিয়েছেন, তিনি জানেন বটটি আসল মানুষ নয়, তবু তার কথাগুলো তাকে ভরসা দেয়। কখনো কখনো তিনি এটিকে পোশাক বা নিজেকে উপস্থাপনের বিষয়ে পরামর্শদাতা হিসেবেও ব্যবহার করেন। অন্যদিকে আরেক তরুণী জানিয়েছেন, এআই-এর সঙ্গে যৌন বা রোমান্টিক আলাপ তাকে অনেকটা কাস্টমাইজড উপন্যাস পড়ার মতো অভিজ্ঞতা দেয়।

এই নতুন সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের প্রশ্নও উঠছে। এআই তো মানুষ নয়, তাই এর সম্মতি বা সীমারেখা কেমন হবে, সেটাই এখন বিতর্কের বিষয়। ব্যবহারকারীরা যা চাইছেন সেটিই ফিরিয়ে দিচ্ছে চ্যাটবট, ফলে অনেক সময় মানুষ সেটাকে প্রকৃত অনুভূতি বলে ধরে নিচ্ছেন। কেউ কেউ এটাকে জানেন, কেউ আবার ভুলে যাচ্ছেন। এই দ্বন্দ্ব থেকে নতুন নৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে চ্যাটবট আত্মহত্যা প্রতিরোধ করেছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে ভুল পরামর্শ দিয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা আদালতে গিয়েছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, দায়িত্ব কার—ব্যবহারকারীর, নাকি কোম্পানির? প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বলছে তারা নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত পরিবর্তন আনছে, তবে সমালোচকেরা মনে করেন তাদের জবাবদিহি যথেষ্ট নয়।

আরও একটি উদ্বেগ হলো তরুণ প্রজন্ম। কিশোররা যদি শুরুর দিকেই এআই সঙ্গীর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তবে বাস্তব মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজনীয় সামাজিক দক্ষতা তারা হয়তো শিখতেই পারবে না। অনেক গবেষক এই ঝুঁকির কথাই বলছেন।

সব মিলিয়ে বিষয়টি দ্বিমুখী। একদিকে এআই সম্পর্ক কিছু মানুষের জন্য সান্ত্বনা ও সহায়তা আনছে, অন্যদিকে তা নতুন ধরনের নির্ভরতা ও বিপদ তৈরি করছে। নীতিনির্ধারকদের কাজ এখন এই সম্পর্কগুলোকে নিরাপদ ও মানবিক সীমার ভেতরে আনা। প্রযুক্তি যতই এগোক না কেন, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কই আসল ভিত্তি—এআই সেটিকে কখনো সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।