আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিষের মধ্যেই কি রয়েছে অমৃতের সন্ধান? বিষের দাম জানলে এমন প্রশ্ন মাথায় আসাও অস্বাভাবিক নয়। কারণ এই বিষের মাত্র এক গ্রামের দাম ৩২ লক্ষ টাকারও বেশি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। বিশ্বের সবচেয়ে দামি তরলগুলির তালিকায় অন্যতম কাঁকড়াবিছের বিষ। প্রতি গ্রামে এর দাম দাঁড়ায় ৩৯ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত। কারণ, এই বিষে এমন সব জটিল উপাদান রয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং গবেষণা থেকে শুরু করে ওষুধ তৈরি ও বায়োটেকনোলজি সব দিকেই নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে মনে করা হচ্ছে।

বিচ্ছুর বিষ আসলে এক ধরনের প্রাকৃতিক পেপটাইড ও প্রোটিনের মিশ্রণ। এই উপাদানগুলি মানুষের স্নায়ুতন্ত্র এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর এমন প্রভাব ফেলে যা অত্যন্ত বিরল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই বিষে থাকা কিছু বিশেষ যৌগ মস্তিষ্কের টিউমার, অটোইমিউন রোগ, আর্থ্রাইটিস ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। আবার এই বিষ থেকেই এমন কিছু উপাদান তৈরি হচ্ছে যা বায়োইনসেক্টিসাইড হিসেবে, অর্থাৎ কীটনাশক হিসাবে ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস করতে সক্ষম। ফলে কৃষিক্ষেত্রেও এর ব্যবহার বাড়ছে।
আরও পড়ুন: নিজেই জানতেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা! মলত্যাগ করতে গিয়ে সন্তানের জন্ম দিলেন মহিলা
আরও পড়ুন: রোগীদের উপুড় করে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলে নিতেন! তারপর…? বিস্ফোরক অভিযোগ নামী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে


তবে এই বিষ এত মূল্যবান তার অন্যতম প্রধান কারণ বিষ পাওয়া যায় অতি অল্প পরিমাণে। প্রতিটি বিচ্ছু থেকে মাত্র কয়েক ফোঁটা বিষ সংগ্রহ করা সম্ভব। তাছাড়া, এর রাসায়নিক গঠন এতটাই জটিল যে তা বিশ্লেষণ ও ব্যবহারযোগ্য করতে অনেকটা সময় লাগে, লাগে দক্ষতাও। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সব মিলিয়ে, বিচ্ছুর বিষকে এখন বিরল প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে ধরা হয়।

কীভাবে সংগ্রহ করা হয় এই বিষ?
কাঁকড়াবিছের বিষ সংগ্রহের প্রক্রিয়াটির নাম ‘মিল্কিং’। এতে বিচ্ছুকে বিশেষভাবে উত্তেজিত করা হয়, যাতে সে কয়েক মাইক্রোলিটার বিষ ছাড়ে। কিছু ক্ষেত্রে হাতে আলতো চাপ বা টোকা দিয়ে এটি করা হয়। তবে গবেষণাগারে সাধারণত সামান্য বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় বিচ্ছুর হুলে। বিদ্যুতের প্রভাবে বিষগ্রন্থি সংকুচিত হয়, আর সেখান থেকে ঝরে পড়ে বিষ। এই ফোঁটাগুলি সংগ্রহ করা হয় কাঁচের সূক্ষ্ম নলের সাহায্যে।
এভাবে নিরন্তর বিষ সংগ্রহ করা হয়। কারণ, প্রতিটি বিচ্ছু একবারে এতই অল্প পরিমাণে বিষ ঢালে যে তা দিয়ে বড় আকারে গবেষণা চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া, সংগ্রহের সময় বিচ্ছু এবং গবেষক, দু’জনেরই সুরক্ষার জন্য কড়া সতর্কতা মেনে চলতে হয়। বিষ সংগ্রহের পর সেটিকে ফ্রিজ-ড্রাই করে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে গবেষণা বা ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়।

বিজ্ঞানীদের মতে, বিচ্ছুর বিষ ভবিষ্যতে চিকিৎসা জগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। যে তরল আজ পৃথিবীর অন্যতম দামি, আগামী দিনে সেটিই হয়তো অগণিত প্রাণ বাঁচানোর হাতিয়ার হয়ে উঠবে।