বৃষ্টি পড়লেই মুঠো মুঠো চুল ওঠে? মাথায় চিরুনি ঠেকাতেও ভয়? চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই লক্ষ্য করেন যে, বর্ষার পরবর্তী মাসগুলোতে চুল পড়ার সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ঋতু পরিবর্তনের কারণে চুল পড়া সাধারণত স্বাভাবিক, তবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত এবং জীবনধারার কারণে এটি আরও তীব্র হতে পারে।

ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. প্রিয়াঙ্কা আগরওয়াল জানিয়েছেন যে, বর্ষাকালে আর্দ্রতা এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে সাময়িকভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হতে পারে। তবে একাধিক অভ্যন্তরীণ কারণও চুল পড়ার জন্য বড় ভূমিকা রাখে।

স্ট্রেস (চাপ): শারীরিক এবং মানসিক চাপ, যেমন অতিরিক্ত কাজের চাপ, ঘুমের ঘাটতি, অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে ওঠা চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিচক্রে ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়ে।

পুষ্টির ঘাটতি: ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, বায়োটিন, আয়রন ও প্রোটিনের ঘাটতি সাধারণত মাথার ত্বকের দুর্বলতা ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত।
হরমোনজনিত সমস্যা: থাইরয়েডের অসামঞ্জস্যতা এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) নারীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
প্রসব-পরবর্তী চুল পড়া: অনেক মহিলার গর্ভাবস্থার পর হরমোন পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ে। এটি একটি সাময়িক সমস্যা।
জিনগত কারণ: অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া বা পুরুষ/মহিলা প্যাটার্ন টাক পড়া একটি বংশগত সমস্যা, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় আরও বেশি দেখা দেয়।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়
চুল পড়া রোধ করতে চিকিৎসকরা সাধারণত জীবনধারায় পরিবর্তন, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

জীবনধারার পরিবর্তন: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিন ব্যবহার কমানো চুলের বৃদ্ধির স্বাভাবিক চক্রকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।

পুষ্টিগত সহায়তা: প্রোটিন, ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাদ্য খুবই প্রয়োজনীয়। নিরামিষভোজীরা সয়াবিন, স্প্রাউটস এবং পনির থেকে প্রোটিন পেতে পারেন। অন্য দিকে, আমিষভোজীদের জন্য ডিম, চর্বিহীন মাংস এবং মাছ উপকারী।

পরিপূরক এবং বাহ্যিক চিকিৎসা: হালকা চুল পড়ার ক্ষেত্রে বাজারে পাওয়া যায় এমন বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট এবং পেপটাইড–ভিত্তিক সিরাম কিছুটা সাহায্য করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
স্থায়ী বা অতিরিক্ত চুল পড়াকে অবহেলা করা উচিত নয়। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করলে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো শনাক্ত এবং যথাযথভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ফল পেতে ব্যক্তিগতভাবে নির্ধারিত চিকিৎসা পরিকল্পনাও বলে দেওয়া হয়।
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন যে, একটি ঋতুতে চুল পড়া সাধারণত সাময়িক হলেও, যদি তা ক্রমাগত বা অত্যধিক হয় তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—যাদের চুল পড়ার সমস্যা গুরুতর, তারা ঘরোয়া প্রতিকারেই সীমাবদ্ধ না থেকে অবশ্যই পেশাদার চিকিৎসা গ্রহণ করুন।