আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাঝরাতে ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘দেখা হয়েছিল?’। ওপার থেকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উত্তর এল শুধু একটি থাম্বস-আপ ইমোজি। সকালে ‘কেমন আছ?’ পাঠানোর পর দুপুর গড়িয়ে উত্তর এল ‘K’। এই ছোট ছোট ভার্চুয়াল কথোপকথন, নীল টিক (ব্লু টিক) দেখেও উত্তর না আসা, কিংবা শব্দহীন ইমোজির আদানপ্রদান-এগুলো কি শুধুই আলস্য, নাকি এর পিছনে লুকিয়ে আছে সম্পর্কের গভীর কোনও সংকেত? ডিজিটাল যুগে দাঁড়িয়ে এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে বহু মানুষকে। তরুণ প্রজন্ম যেখানে ফোনের স্ক্রিনেই অর্ধেক প্রেম সেরে ফেলছে, সেখানে টেক্সট করার ধরনই হয়ে উঠতে পারে অপরকে মাপার এক নতুন চাবিকাঠি।

সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, মোবাইল আসার পর সম্পর্কের ধরন বদলেছে। আগে যেখানে চিঠি বা মুখোমুখি কথা বলাই ছিল ভরসা, এখন সেখানে টেক্সটিং হয়ে উঠেছে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আর এই মাধ্যমেই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিত্ব, যা সম্পর্কে ফেলছে গভীর প্রভাব।

‘হুম-হ্যাঁ-ওকে’ প্রজন্ম: এঁরা হলেন সংক্ষিপ্ততার পূজারী। দীর্ঘ মেসেজের উত্তরে ‘হুম’, ‘ওকে’, ‘ঠিক আছে’ লিখেই দায়িত্ব সারেন। এঁদের সঙ্গীরা প্রায়শই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। তাঁদের মনে হতে থাকে, অপর প্রান্তের মানুষটি হয়তো বিরক্ত বা কথায় আগ্রহী নন। এর ফলে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে। মনোবিদদের মতে, এঁরা হয়তো বাস্তবে স্বল্পভাষী অথবা টেক্সট করতে পছন্দ করেন না, কিন্তু তাঁদের এই অভ্যাস সঙ্গীর মনে গভীর ক্ষতর সৃষ্টি করতে পারে।

ইমোজি-নির্ভর কথক: এঁদের অভিধানে শব্দের আকাল। আনন্দের খবর হোক বা দুঃখের, সবেতেই এঁদের ভরসা এক একটি ইমোজি বা জিআইএফ। হালকা কথা চালাচালি করার জন্য এই পদ্ধতি ভাল হলেও, গভীর বা সংবেদনশীল আলোচনায় শব্দের অভাব অস্বস্তির জন্ম দেয়। সঙ্গীর মনে হতে পারে, তাঁকে বা তাঁর অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

বিস্তারিত বর্ণনাকারী: এই ধরনের মানুষেরা প্রতিটি মেসেজেই যেন একটি রচনা লেখেন। ছোটখাটো বিষয়েরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেন। এঁদের সঙ্গীরা সাধারণত নিজেদের গুরুত্ব অনুভব করেন এবং বোঝেন যে অপর প্রান্তের মানুষটি সম্পর্কে যথেষ্ট মনোযোগী। তবে কখনও কখনও এই অতি-বিস্তারিত মেসেজ অপর পক্ষের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে, বিশেষত যখন তিনি কোনও কাজে ব্যস্ত থাকেন।

‘লেট লতিফ’ বা বিলম্বিত জবাব: এঁরা মেসেজ দেখলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা উত্তর দেন না। এই অভ্যাসটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মেসেজ সিন হয়ে যাওয়ার পর উত্তরের প্রতীক্ষা সঙ্গীর মনে একরাশ উদ্বেগ, চিন্তা এবং অভিমানের জন্ম দেয়। ‘ব্যস্ত ছিলাম’- এই যুক্তি অনেক সময়ই সম্পর্কের ফাটল ঢাকতে পারে না।

তবে একটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। টেক্সটিং স্টাইলকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে কোনও সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। এমনও হতে পারে, যে মানুষটি টেক্সটে ভীষণ অনাগ্রহী, তিনি বাস্তবে আপনার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। আবার এর উল্টোটাও সত্যি। এম। শুধু টেক্সটের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীকে বিচার করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভার্চুয়াল অনুমানের চেয়ে মুখোমুখি বসে কথা বলাই সুস্থ সম্পর্কের আসল ভিত্তি।

দিনশেষে প্রযুক্তি একটি মাধ্যম মাত্র। সঙ্গীর টেক্সট করার ধরন নিয়ে মনে কোনও প্রশ্ন জাগলে, তা নিয়ে সরাসরি কথা বলাই শ্রেয়। কারণ নীল টিকের চেয়ে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলাই একটি সুস্থ সম্পর্কের আসল চাবিকাঠি।