আজকাল ওয়েবডেস্ক:  মুখের উপর ছোট্ট একটা ব্রণ। আয়নার সামনে দাঁড়ালেই হাতটা নিশপিশ করে ওঠে। নখ দিয়ে খুঁটে বা জোরে চেপে দিলে সব সাফ- এমনটাই ভাবেন অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু জানেন কি, এই সামান্য অভ্যাসই ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর বিপদ, এমনকী মৃত্যুও? চিকিৎসাবিজ্ঞান মুখের একটি নির্দিষ্ট অংশকে ‘ডেথ ট্রায়াঙ্গল’ বা ‘মারণ ত্রিভুজ’ বলে চিহ্নিত করেছে। এখানেই ব্রণ নিয়ে সামান্যতম ছেলেখেলাও হতে পারে প্রাণঘাতী।

কী এই ‘মারণ ত্রিভুজ’?
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দুই ঠোঁটের প্রান্ত থেকে নাকের গোড়া পর্যন্ত যে কাল্পনিক ত্রিভুজ তৈরি হয়, সেটিই হল এই বিপজ্জনক অঞ্চল। এই ত্রিভুজের মধ্যে নাক, উপরের ঠোঁট এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা পড়ে। দেখতে আপাত ভাবে নিরীহ হলেও, দৈহিক গঠনের দিক থেকে এই অংশটি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
কেন এতটা বিপজ্জনক এই অঞ্চল?
এর কারণ লুকিয়ে রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের ঠিক নীচে থাকা এক জটিল রক্তজালিকার মধ্যে। মুখের এই ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চলের শিরা-উপশিরাগুলি সরাসরি মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘ক্যাভারনাস সাইনাস’ নামক একটি বড় শিরার সঙ্গে যুক্ত। ক্যাভারনাস সাইনাস আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ করে। যা স্নায়বিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, শরীরের অন্যান্য অংশের শিরায় যেমন ভালভ (Valve) থাকে, যা রক্তের উল্টোমুখী প্রবাহকে বাধা দেয়, মুখের এই অঞ্চলের শিরাগুলিতে তেমন কোনও ভালভ থাকে না। ফলে রক্তপ্রবাহ উভয়মুখী হতে পারে।
যখন আমরা এই ‘মারণ ত্রিভুজের’ মধ্যে থাকা কোনও ব্রণ, ফুসকুড়ি বা ফোঁড়া নখ দিয়ে ফাটাই, তখন ত্বকের উপরিভাগে থাকা ভয়ঙ্কর ব্যাকটেরিয়া, (যেমন- স্ট্যাফাইলোকক্কাস) সরাসরি রক্তস্রোতে মিশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। ভালভ না থাকার কারণে সেই জীবাণুযুক্ত রক্ত উল্টো পথে মস্তিষ্কের দিকে বইতে শুরু করে এবং সহজেই পৌঁছে যায় ক্যাভারনাস সাইনাসে।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?

কী হতে পারে এর পরিণতি?
জীবাণু ক্যাভারনাস সাইনাসে পৌঁছে গেলে সেখানে গুরুতর সংক্রমণ বা ‘ক্যাভারনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস’ নামক এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে, যা থেকে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধু তাই নয়, সংক্রমণ মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেসে ছড়িয়ে পড়লে মেনিনজাইটিস, ব্রেন অ্যাবসেস (মস্তিষ্কে ফোঁড়া) এমনকি দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো মারাত্মক ঘটনাও ঘটতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে এই সংক্রমণ প্রাণঘাতীও হতে পারে।
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?

তাহলে উপায় কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ব্রণ হলে ধৈর্য ধরতে হবে। ব্রণ ফাটানোর চেষ্টা না করে বরং কিছু ঘরোয়া বা ডাক্তারি পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া উচিত।
ব্রণর উপর গরম জলের ভাপ নিলে তা নিজে থেকেই পেকে ফেটে যেতে পারে।
টি-ট্রি অয়েল বা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোনও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি ওই অংশে ব্রণর আকার অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, তীব্র যন্ত্রণা হয় বা জ্বর আসে, তবে বিন্দুমাত্র দেরি না করে ত্বক বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।
সুতরাং, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রণ ফাটানোর আগে দু’বার ভাবুন। মুখের সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে অজান্তেই নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন না তো?